একটি কফিনের পাশে বাংলাদেশ

ড. জাকির হোসেন

মহান স্বাধীনতার ঘোষক এবং স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতে শোকে মুহ্যমান ছিল গোটা জাতি। তাঁর কফিনের পাশে অবস্থান নিয়েছিল গোটা বাংলাদেশ। ঢাকার সুপ্রশস্ত মানিক মিয়া এভিনিউতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। রাজধানী ঢাকার সব পথই সেদিন মিশে গিয়েছিল এক মোহনায়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় শহীদ জিয়ার মরদেহ আনার পর তার জানাজায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। সবার চোখে ছিল কান্না আর হৃদয়ে শোকানুভ‚তি। বিপথগামী সেনাসদস্যরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোররাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তাঁর মরদেহ সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৭ মাইল দূরে রাঙ্গুনিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাশে পাহাড়ের ঢালুতে কবর দেয়। হত্যাকারীরা ওই কবরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আরও রাখে ওই ঘটনায় নিহত কর্নেল আহসান ও ক্যাপ্টেন হাফিজের লাশ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ রাখা হয় ওই দুজন সেনা অফিসারে মাঝে।
১ জুন বেলা ১১টায় জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ তোলা হয়। ওইদিন বিকাল পৌনে ৪টায় বিমান বাহিনীর একটি বিমানে চট্টগ্রাম থেকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ ঢাকায় আনা হয়। এ সময় এক বেদনাঘন শোকার্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয় শহরজুড়ে। বিমানবন্দর থেকে জিয়াউর রহমানের কফিনটি একটি সামরিক যানে সেনানিবাসের প্রেসিডেন্ট ভবনে আনা হয়। সেনানিবাসের ১নং গেট থেকে প্রেসিডেন্ট ভবন পর্যন্ত রাস্তার দ্ইু পাশে বিমান বাহিনীর সদস্যরা শ্রদ্ধাবনতভাবে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখান। আর গেটের বাইরে সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ। কফিনটি প্রেসিডেন্ট ভবনে আনার পর এখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বেগম খালেদা জিয়া, তাঁদের দুই ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান, আত্মীয়-পরিজন এবং অপেক্ষমাণ লোকজন সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিকাল ৫টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কফিন সংসদ ভবনে নেওয়া হলে সেখানেও তাঁর মৃতদেহ একনজর দেখার জন্য শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। এ পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের দেখার সুবিধার জন্য এদিন (১ জুন) রাতে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করা হয়। ফলে রাত ৯টা পর্যন্ত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাশ দেখার জন্য পুরনো জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ। মানুষের ঢলে এয়ারপোর্ট রোড, ফার্মগেট, মহাখালী রেলগেট, বাংলামটর এলাকা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এসব এলাকা ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। রাতে মহিলা, গৃহিণী এমনকি শিশুরা পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের লাশ একনজর দেখার জন্য ভিড় জমায়।
পর দিন ২ জুন সকাল ১১টা পর্যন্ত কফিনটি তেজগাঁও সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাখা হলে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অগণিত মানুষ শহীদ জিয়াকে শেষবারের মতো একনজর দেখেন। এদিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। এসব খবর ওই সময়ের দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, দৈনিক আজাদসহ বিভিন্ন পত্রিকা গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। একই সঙ্গে পত্রিকাগুলো স্বাধীনতা সংগ্রামে জিয়াউর রহমানের অসামান্য অবদান, একটি নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে রাষ্ট্রের স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনা, একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের সাফল্য ইত্যাদি উল্লেখ করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।
২ জুন দৈনিক আজাদ ‘একটি কফিনের পাশে বাংলাদেশ’ শিরোনামের খবর ৮ কলামজুড়ে প্রকাশ করে। আর দৈনিক ইত্তেফাক এদিন ‘ঢাকায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃতদেহ : অগণিত মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি’ এবং ‘রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জিয়ার লাশ চাপা দেওয়া হয়’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। এর পরদিন অর্থাৎ ৩ জুন দৈনিক আজাদ প্রধান খবর হিসেবে ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান
পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাষ্ট্রপতি জিয়ার লাশ দাফন’- শিরোনামে ৮ কলামে প্রকাশ করে। এর পরদিন ৪ জুন বৃহস্পতিবার দৈনিক আজাদ ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ইন্তেকালে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত শোক প্রস্তাব গৃহীত : বিশ্ব এক বিপ্লবী সমাজ সংস্কারক হারাইল’ শিরোনামে প্রধান খবর হিসেবে ৮ কলামে প্রকাশ করে। আর এদিন দৈনিক ইত্তেফাক ‘সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত : জিয়া ছিলেন গণতন্ত্রের বিশিষ্ট সাধক জাতীয়তাবাদী চিন্তার অগ্রনায়ক’ শিরোনামে প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশ করে।
এসব প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ আধুনিক বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ স্থপতি মরহুম প্রেসিডেন্ট একজন নিঃস্বার্থ দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত সৎ, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী, ধর্মপ্রাণ, সদালাপী ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি নিজের পরিবারের কথা চিন্তা না করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন। অনুরূপ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় বিরল। দৈনিক ইত্তেফাক এবং আজাদে প্রকাশিত কয়েকটি রিপোর্ট তুলে ধরা হলোÑ

একটি কফিনের পাশে বাংলাদেশ
স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রামে বিপথগামী কতিপয় সেনার হাতে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে নিহত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাশ গতকাল ঢাকা আনয়নের পর এক বর্ণনাতীত মর্মান্তিক শোকাবহ দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। রাষ্ট্রপতি জিয়ার লাশ ঢাকা পৌঁছেছে এখবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নামিয়া পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলামোটর, আসাদগেট এবং মহাখালী রেলগেটের দিক হইতে জনতার ¯্রােত সংসদ ভবনের দিকে অগ্রসর হইতে থাকে। ক্রমে জনতার শ্রোতের মুখে ফার্ম গেট হইতে মহাখালী গেট পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়া যায়। জনতার ঢেউ ছুটিয়া চলিয়াছে একদিকে। মনে হইয়াছে রাজধানী তথা সারা বাংলাদেশের মানুষ জড়ো হইয়াছে একটি কফিনের পাশে। রাষ্ট্রপতি জিয়া ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিয়াছেন। তবে তিনি তার জনতার উদ্দেশে হাত উঁচাইয়া তাহাদের প্রতিউত্তর দেন নাই। লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে দেহরক্ষীদের চোখ এড়াইয়া অকস্মাৎ গাড়ি থামাইয়া স্বীয় গমন পথে অপেক্ষমাণ খাটিয়া খাওয়া সাধারণ মানুষগুলোর সহিত হাত মিলান নাই। অথবা এই কথাও বলেন নাই আপনারা কেমন আছেন।
তিনি আসিয়াছেন। কিন্তু চির নীরব। চিরনিদ্রায় শায়িত। কফিনের অভ্যন্তরে। কফিন জাতীয় পতাকা এবং পুষ্পে পুষ্পে আচ্ছাদিত।…
গতকাল বিকাল ৫টা হইতে লাশ জাতীয় সংসদ ভবনে রাখা হইয়াছে। আজ সকাল ১১টা পর্যন্ত কফিন সংসদ ভবনে রাখা হইবে। (দৈনিক আজাদ : ৩ জুন মঙ্গলবার ১৯৮১)
ঢাকায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার মরদেহ : অগণিত মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি
(ইত্তেফাক রিপোর্ট) : এক বেদনাঘন শোকার্ত পরিবেশে চট্টগ্রাম হইতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মরদেহ ঢাকায় আনয়ন হয়। নিহত প্রেসিডেন্টকে একনজর দেখার জন্য সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামে।
গতকাল (সোমবার) অপরাহপ্ত পৌনে ৪টায় চট্টগ্রাম হইতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মরদেহের কফিন লইয়া বিমান বাহিনীর একটি বিমান কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় তেজগাঁও বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করিয়ে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কফিনটি শ্রদ্ধাসহকারে গ্রহণ করেন। বিমান হইতে কফিনটি বিমান বাহিনীর সদস্যগণ একটি খোলা সামরিক যানে উঠাইয়া নেন এবং কফিনটি পুষ্পস্তবকে সজ্জিত করা হয়। কফিনের সহিত বিমানে বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসান, উপমন্ত্রী মিসেস কামরুন্নাহার জাফর এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ডক্টর মিসেস আমিনা রহমান আগমন করেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে শোকে মুহ্যমান দেখা যাইতেছিল।
প্রেসিডেন্টের কফিনটি লইয়া সামরিক যানটি সেনানিবাসের প্রেসিডেন্ট ভবনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করিলে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ ‘গার্ড অব অনার’ প্রদর্শন করেন। সেনানিবাসের ১নং গেট হইতে প্রেসিডেন্ট ভবন পর্যন্ত রাস্তার দ্ইু পার্শ্বে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ শ্রদ্ধাবনতভাবে দাঁড়াইয়া থাকিয়া সম্মান দেখান। এই সময় ১নং গেটের বাহিরে হাজার হাজার মানুষ প্রতীক্ষাকুলভাবে দাঁড়াইয়াছিলেন।
কফিনটি প্রেসিডেন্ট ভবনে লইয়া যাওয়ার পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। বেগম জিয়াউর রহমান, তাঁহাদের দুই পুত্র, আত্মীয়-পরিজন এবং অপেক্ষমাণ লোকজন সকলেই কান্নায় ভাঙ্গিয়া পড়েন।
সংসদ ভবনে : জনসাধারণের দেখার জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশের কফিনটি গতকাল অপরাহেপ্ত সাড়ে ৫টায় সংসদ ভবনের সম্মুখে লইয়া আসা হয়। সেখানে প্রথমে সংসদ সদস্যরা শোকাহত চিত্তে কফিনের সম্মুখে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতির মরদেহ আনার খবর রাজধানীতে ছড়াইয়া পড়িলে একঘণ্টা সময়ের মধ্যে এয়ারপোর্ট রোডে অগণিত লোক রাস্তায় নামিয়া আসেন। পুলিশ শোকাহত লোকজনকে সারিবদ্ধ করিবার চেষ্টা করে। বাংলামোটর হইতে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হইয়া যায়। আগামীকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত কফিনটি সংসদ প্রাঙ্গণে রাখা হইবে। জনসাধারণের দেখার সুবিধার্থে গতরাতে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করা হয়।
সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়, রাত ৯টা পর্যন্ত নিহত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাশ দেখার জন্য জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে প্রচÐ ভিড় পরিলক্ষিত হয়। কফিন রাখা জায়গার দিকে মানুষের লাইন এয়ারপোর্ট রোডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আগাইতেছিল। একদিকে ফার্মগেট এবং অন্যদিকে মহাখালী রেলগেট পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এসব ও আশপাশের এলাকায় মানুষের ভিড় অঘোষিত মিছিলের মতো পরিলক্ষিত হয়।
রাত পর্যন্ত মহিলা, গৃহিণী এমনকি শিশুদের পর্যন্ত ভিড় করিতে দেখা যায়। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দীন হোসেন, আওয়ামী লীগের (মিজান) মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুসলিম লীগের খান এ সবুর, জাসদের মেজর (অব.) এম এ জলিল, আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, একতা পার্টির সৈয়দ আলতাফ হোসেন, শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সিদ্দিকুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির নাসিম আলী গতকাল সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের সম্মুখে শায়িত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কফিনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। (দৈনিক ইত্তেফাক : ২ জুন মঙ্গলবার ১৯৮১)
১৯৭৫ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে, প্রকৃতপক্ষে সে সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। কোথা থেকে কী হচ্ছে তা জানতে পারছিলেন না কেউ। চার দিকে এক অনিশ্চয়তা-বিশৃঙ্খলার মাঝে আধিপত্যবাদের শ্যেন দৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত ছিল সারা জাতি। ইতিহাসের সেই বিশেষ ক্ষণে সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন।
তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব তিনি বাংলাদেশের মানুষের উপযোগী একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটান। দেশে সমন্বয়ে র রাজনীতি চালু করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে এক দিকে যেমন চরম বামপন্থীরা স্থান পায় তেমনি চরম ডানপন্থীরাও জায়গা করে নেন। একটি উদার ও মধ্যপন্থী দল হিসেবে বিএনপিকে গড়ে তোলেন তিনি, যা বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল। তার অমরকীর্তি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংবিধানে ‘বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করা। এছাড়াও তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস জোগান তিনি। তাকে নিয়ে অনেকেই আজকাল ইঙ্গিতে কটূকথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু জীবদ্দশায় কেউ কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে পারেননি। তার মতো সাদামাটা জীবনযাপনের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ কেন সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ইতিহাসে খুব বেশি নেই। তার চরিত্রে কোনো কপটতা ছিল না। সময় ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তিনি নেতৃত্বে এসেছেন। কাউকে উৎখাত কিংবা উচ্ছেদ করে তিনি আসেননি। এখানেই জিয়াউর রহমান ও অন্যদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। তিনি যে কত জনপ্রিয় ছিলেন তা বোঝা গিয়ে ছিল ঢাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত তার নামাজে জানাজায়। সেদিন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল ‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ।’

Recent Posts