রাষ্ট্র পরিচালনায় জিয়াউর রহমানের অবদান

মোঃ সাইদুর রহমান সাধু

এই বিশ্ব ধরাধামে যা কিছু কৃত্রিম সৃষ্টি তার পিছনে কোন না কোন নৈপূর্নতা রয়েছে। আর সৃষ্টিশীলদের এই নৈপূর্নতায় বিশ্ব ইতিহাসে তারা চির স্বরনীয় এবং বরণীয়। তেমনি বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন স্মরনীয় তেমনি ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়েই আছেন।

আমরা জাতি হিসাবে যেমন সহজ তেমনি সরলমনা; তেমনি আবার নিজের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে ইস্পাত কঠিন পাহাড়ের ন্যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পাকিস্থান যেমন আমাদেরকে শোষন নিপিরণ করেছে ঠিক তেমনি আমরা সমুচিন জবাবের ইতিহাসও গড়ে তুলেছি।

১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর পাকিস্থানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বাঙ্গালি জাতি তাদের ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে শেখ মুজিবর রহমানকে পূর্বপাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ম্যান্ডেট সর্বজনীন ভাবে প্রদান করে। শেখ মুজিবর রহমান যে ছয়দফার আলোকে দেশের স্বাধীন ভার পরিচালনা করবেন তা ১৯৭১ সালের ৩ রা জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানের জনসভায় তা স্পষ্ট ভাবেই বলেছিলেন।

কিন্তু চতুর পাকিস্থান বাঙ্গালি জাতির ম্যান্ডেট কে পাশ কাটিয়ে যাবার যেমন অপচেষ্টা করেন। তেমনি শেখ মুজিবর রহমান অ-খন্ড পাকিস্থান রেখে নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই পূর্ব পাকিস্থানের প্রধান মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব গ্রহনের জন্য সামরিক জান্তাদের সাথে চলতে থাকে তার রাজনৈতিক রফাদফা। আর এ কারনেই শেখ মুজিবর রহমান ৭ই মার্চের ভাষনে কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন আবার ১৬ ই মার্চ থেকে ২৩ শে মার্চ পর্যন্ত নিজে এবং আওয়ামীলীগের নেতাদের মাধ্যমে পাকিস্থানের সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে চলতে থাকে আলোচনা ভিত্তিক রফাদফা। তবে শেখ মুজিবর রহমানের পাকিস্থানের সামরিক জান্তাদের উপর অবিচল আত্ব বিশ্বাসের পরিসমাপ্তি ঘটে ২৫ শে মার্চ মধ্য রাতে সামরিক জান্তাদের কর্তৃক শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেফতার পূর্বক পশ্চিম পাকিস্থানে নিয়ে যাওয়া এবং নিরীহ বাঙ্গালি জাতির উপর হত্যা কান্ডের মধ্য দিয়ে।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ অন্ধকারময় ঐ কালো রাতে ই আনুমানিক ২.১৫ মিনিটে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের এমটি সেলে দাঁড়িয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পাকিস্থানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ পূর্বক মহান স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষনায় বাঙ্গালি জাতি স্বাধীনতার যুদ্বে নিজেকে উৎসর্গ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের বিশেষ অবদান:
১. জিয়াউর রহমানের নামেই জেড ফোর্স গঠন করা হয়।
২. মহান স্বাধীনতা যুদ্বের সময় জিয়াউর রহমান উত্তর বঙ্গের রৌমারিতে বাংলাদেশের প্রথম পোষ্ট অফিস স্থাপন করেন এবং সেখান থেকেই বাংলাদেশ হিসাবে বিভিন্ন অঞ্চলে চিঠি পত্র সরবরাহ হতে থাকে।
৩. প্রবাসী সরকার গঠন হলে জিয়াউর রহমান সরকারের রাজস্ব আদায়ের সূচনা করেন।
৪. জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার যুদ্ধে নিজে একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জিয়াউর রহমানের নৈপূর্নতার কারনেই মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরো দৃঢ় আকার ধারন করে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে দ্রুত তরান্বিত করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা বিজয় অর্জনের পরে শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে কোন রুপ উচ্চালিভাস না করে অবলীলায় সৈনিক জীবনে ফিরে যান।

১৯৭৫ সালের ২রা নভেম্বর রাজনৈতিক ঘটনাবহুল সময়ে জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টে খালেদ মোশারফ কর্তৃক বন্দী করা হয়। সেই সাথে খালেদ মোশারফের ঐ ক্রয়ের সাথে প্রতিবেশি রাষ্ট্র এবং আওয়ামীলীগের সম্পর্ক উন্মোচিত হওয়ার কারনে ৭ই নভেম্বর দেশের সাধারন জনগনকে সাথে নিয়ে সাধারন সৈনিকদের প্রচেষ্টায় জিয়াউর রহমান কে বন্ধি অবস্থায় থেকে উদ্ধার করলে সময়ের পরিক্রমায়
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসিন হোন।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পরে বিশৃঙ্খল
রাষ্ট্রে সেনাবাহীনি সহ সকল ক্ষেত্রে শৃৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন এবং ভারসাম্যহীন রাষ্ট্রের সমতা এনে ভারসাম্য রক্ষা করেন। জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতা গ্রহনের পরে জনগনের মতামত যাচাইয়ের জন্য হ্যা না ভোটের ব্যবস্থা করেন এবং বিপুল ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার স্বীকৃতি লাভ করেন।

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনায় আত্বনিয়োগ করে বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে সূদৃঢ় অবস্থানে নেওয়ার চিন্তা করেন। আর এ লক্ষে দেশের প্রতিটি নাগরিককে আত্বনির্ভরশীল ও দক্ষজাতি হিসাবে গড়ে তুলতে মনোনিবেশ করেন; এ কারনেই জিয়াউর রহমান কৃষি প্রধান দেশে কৃষি বিপ্লবের জন্যই কোদাল হাতে ছুটে চলেন দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। জিয়াউর রহমান নিজ হাতে জনগনকে সাথে নিয়ে খাল খনন করে কৃষকদের সেচ কাজে পানি প্রবাহের ব্যাবস্থা করেন।বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্যই যুব মন্ত্রনালয়ের ব্যবস্থা করেন।দেশের প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসার জন্যই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পল্লী চিকিৎসকের ব্যাবস্থা করেন।

প্রামের সামাজিক উন্নয়নে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা চালু করেন।পাহাড়ি এলাকায় আন্তজার্তিক চক্রান্ত রুখতে সারা দেশ থেকে গরিব অসহায় কৃষকদের নিয়ে গিয়ে বসবাসের জন্য বিনামূল্য জমি ও চাষাবাদের জন্য গুরু সরবরাহ করেন।দেশের সার্বিক আইন শৃৃঙ্খলা রোধে মহিলাদের কর্মক্ষমতা সম্পৃক্ত করতে মহিলা পুলিশের ব্যাবস্থা করেন।দেশের উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের দেশের কল্যানে সম্পৃক্ত করনের লক্ষে তাদের জন্য সম্মানী ভাতার ব্যাবস্থা করেন।

শুধু তাই নয় দেশের উন্নয়নে রাষ্ট্র পরিচালনায় রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত কর্তা মহোদয়ের দারাই সুসম্পন্ন উন্নয় সম্ভব নয়।আর কারনেই রাষ্ট্রের উন্নয়নে মেধা ভিত্তিক অংশীদরিত্বের জন্য তিনি
ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, সাংবাদিক, শিক্ষক, দেশ বরনীয় কৃর্তিমান মানুষের রাজনৈতিক ভাবে না পেলেও রাষ্ট্র মেরামতে শ্রেণিভেদে দেশ পরিচালনায় অবদান রাখাতে সক্ষম হোন। শুধু তাই নয় জিয়াউর রহমান দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সাগর ভ্রমনে গিয়ে তাদের কে স্ব স্ব অবস্থায় থেকে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করার জন্য আহবান করেন।

আন্তজার্তিক অঙ্গনে দেশকে নিয়ে যান এক অনন্য স্থানে। জিয়াউর রহমান সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে সৌদি যাবার সময় কয়েক হাজার নিম গাছ নিয়ে যান।সেই সাথে জিয়াউর রহমানের নিয়ে যাওয়া নিমগাছ গুলো সৌদি সরকার আরাফারের ময়দানে রোপন করে।যা আজকে আরাফাতের ময়দানে জিয়া বৃক্ষ নামে পরিচিত হয়ে বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশকে নিয়ে নিজেকে প্রজ্জলিত করে রেখেছেন।

৭ই নভেম্বরের আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তখন দেশের দ্বায়িত্ব ভার গ্রহন করেননি।
পূর্ববর্তী সরকারের দূর্নীতির কারনে দেশটা বিশ্ব
অঙ্গনে তলা বিহীন ঝুড়ি হিসাবে পরিনত হয়। জিয়াউর রহমান তদানিন্তন সরকারের দূর্নীতির বেড়াজাল ভেঙ্গে দেশের সকল ক্ষেত্রে শৃৃঙ্খলা
ফিরিয়ে আনেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭সালের ২২শে মে ১৯দফার ঘোষনার মধ্যে দিয়ে দেশ
গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যুগান্তকারি ভুমিকা রাখেন। এবং একইসাথে তিনি শেখ সাহেবের বাকশাল থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন।

জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র পরিচালনায় অবদান সমূহ:

১. জিয়াউর রহমান মানুষের বাকস্বাধীনতা ও কন্ঠরোধ কে আবার জনগনের কাছে ফিরিয়ে দেন।
২. জিয়াউর রহমান জনগনের কল্যানের জন্য মহাখালী নার্সিং কলেজ, জাতীয় হৃদ রোগ ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিঞ্জান ইনষ্টিটিউট স্থাপন করেন।
৩. জিয়াউর রহমান মহিলা পুলিশ,আনছারওভিডিপি তেরি করেন।
৪. জিয়াউর রহমান মহিলা বিষয়ক মন্ত্রনালয় স্থাপন করেন, চাকুরী ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ নারি কোঠা চালু করেন।
৫. জিয়াউর রহমান নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সংসদের ১৫%নারীর সদস্য থেকে ৫০%সংসদ সদস্য কোঠা চালু করেন।
৬. জিয়াউর রহমান জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধে পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় স্থাপন করেন।
৭. জিয়াউর রহমান পূর্বের তদানিন্তন সরকারের দূর্নীতির কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প কারখানাগুলোকে আবার সচল করেন।
৮. দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করার কারনে আজকের আওয়ামীলীগ বাকশালের কবল থেকে মুক্ত হয়ে রাজনীতির সুযোগ পেয়েছিলো।

৯. জিয়াউর রহমান আন্তজার্তিক ভাবে ইরান ইরাক যুদ্ধে ভূমিকা রেখে সূদৃঢ় অবস্থান নিশ্চীত করেছিলো

১০. জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্টার কারনে মুসলিম উম্মাহ এক ভাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়। জিয়াউর রহমানের অনবদ্য চেষ্ঠায় বাংলাদেশ আলকুদস কমিটির সদস্য সহ ওয়াইসির ও সদস্য পদ লাভ করেন ।
১১. দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও উন্নয়নের ভারসাম্য রক্ষায় জিয়াউর রহমান সার্ক গঠন করেন।
১২. শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশর অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে প্রথম গার্মেন্টস খাতের শুভ সূচনা করেন।
১৩. জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য লাভের অনন্য কারিগর।
১৪. তিনি মধ্য প্রাচ্যে শ্রমিক পাঠিয়ে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ শালী দেশ হিসাবে গড়ে তোলার কারিগর।

সর্বোপরি তিনি ছিলেন অদম্য সাহসী এক রাষ্ট্র নায়ক যিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় সৃজনশীল চিন্তা ও সুণিপূন দৃষ্টির কারিগর। যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মেরামতের একমাত্র নৈপূর্ন কারিগর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

Recent Posts