তারেক রহমানের ৫৫৪ দিনের কারাবাস ছিলো গণতন্ত্রের কারাবাস

সঞ্জয় দে রিপন


ফ্যাসিবাদের রূপরেখা নির্মাণের প্রাথমিক পর্বের ষড়যন্ত্রের অংশ হচ্ছে এক-এগারোর সরকার ব্যবস্থা। এক-এগারোর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে অন্ধকার সময় আরোপিত হয়েছে এবং ফ্যাসিজমকে প্রতিষ্ঠা করার পূর্ণব্যবস্থা নিশ্চীত করা হয়েছে। ক্ষমতালোভী এবং ক্ষমতাভোগী একটা জুলুমবাজ সরকার বাংলাদেশের মানুষের মাথার উপর চেপে বসেছে। জনগণের সকল অধিকার খর্ব কর যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা, শুধুই ক্ষমতা নিশ্চীত করেছে ভোটের অধিকার হরণ করে। একারনেই গণতন্ত্রকামী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়।
সেনা সমর্থিত সরকার ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ৭মার্চ ভোররাতে তারেক রহমানকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর টানা ৫৫৪ দিন কারাবাসের পর গণতন্ত্রকামী নেতা তারেক রহমান চিকিৎসারত অবস্থায় জামিন লাভ করেন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে তারেক রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পেয়েছিলেন। তারেক রহমান মুক্তি পেয়েছিলেন এই কারণে দিনটি গুরুত্বপূর্ণ নয় ; দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামী চেতনা সেদিন জাগ্রত হয়েছিলো। আর গণতন্ত্র রক্ষার বিপ্লবের রূপরেখা সেদিনই নেতা নির্বাচন করেছিলো এবং সেদিন গণ-মানুষের দাবী উত্থাপনের একমাত্র নেতা স্বৈরাশাসকের ব্যারিক্যাড থেকে বিশ্বমানবতার সান্নিধ্যে এসেছিলেন; স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশের নেতৃত্বে ত্যাগের মহিমায় প্রতিষ্ঠীত হয়েছিলেন। আজো বালাদেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমান।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র যেমন শুধু একজন উজ্জল বক্তা এবং সংগঠকই ছিলেন না তিনি একজন চিন্তাবিদও ছিলেন। ঠিক তেমনি তারেক রহমানও রাষ্ট্রচিন্তায় সমৃদ্ধ এক বিবেক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে। দূর দেশে থেকেও তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর মেধা দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনকে গণ-আন্দোলনে রূপ দিতে পেরেছে। আর এজন্যই বাংলাদেশের মানুষের কাছে তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে এখন অন্ধকারের সঙ্কটকাল স্থায়ীভাবে বিরাজ করছে; আলোকপ্রভার দ্বার খুব দ্রুত উন্মোচিত না করলে বাংলাদেশটাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। দেশ বাঁচানোর ঐতিহাসিক দায়িত্ব তারেক রহমান পালন করছেন বলেই এই রেসিজমের এতো ভয়। আর এজন্যই তারেক রহমানের উপর সরকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ধারা এখনো বয়ে চলেছে। এজন্যই তাঁকে বিপর্যস্ত-বিপন্ন করার জন্য সরকার নাছোরবান্দা। নির্লজ্জভাবে আইনবিভাগকে জনগণের নাগরিক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে নির্যাতনের মাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কূটচাল চালিয়েই যাচ্ছে এই রেসিজম।
আওয়ামী সরকারের পূর্বনীতির এক-এগারো সরকার কখনই জনগণের পক্ষে কাজ করেননি; যারা শুধুই চেয়েছেন গণতন্ত্রকামী মানুষের কন্ঠরাধ করে দিতে আর এজন্যই জনগণের নেতৃত্ব নিয়ে ছিলো তাদের ভয়। এই ভয় থেকেই তারেক রহমানকে নির্যাতন নীপিড়ণ করা হয়েছে গণতন্ত্রকামী জনগণের মধ্যে ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য। তারেক রহমানকে যারা নির্যাতন করেছে, তারাই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফ্যাসিজমকে প্রতিষ্ঠা করেছে; তারাই গুম খুনের সংস্কৃতি চালু করেছে এবং তারাই ভোটের অধিকার হরণ করেছে। সুতরাং তারেক রহমানকে কারাবন্দী করার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে ফ্যসিজমের রূপরেখা নিশ্চীত করতে পেরেছে; কিন্তু তারেক রহমানের মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের স্বপ্ন জারি রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে যে গণ-আন্দোলন তৈরি হয়েছে সেই আন্দোলনের রূপকার দেশনায়ক তারেক রহমান। এই আন্দোলনকে ভয় পায় বলেই ারেক রহমানের উপর মিথ্যা মামলা, হামলা থেকে ফ্যাসিজমের ষড়যন্ত্রকারীরা বের হয়নি। যার ফলে এক–এগারো সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে তারেক রহমানের ওপর নিপীড়নের ভিন্ন মাত্রা এই সরকার নির্মাণ করেছে। এক-এগারো সরকার যে মামলায় তারেক রহমানের নাম অভিযোগপত্রে দিতে পারেনি, ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সেই মামলায় সম্পূরক চার্জশিট দিয়ে তারেক রহমানের নাম দেওয়া হয়েছে। যা এই সরকারের চূড়ান্ত ফ্যাসিজমের রূপকে প্রকাশ করে। তারেক রহমান নির্দোষ জননেতা; জনগণের পক্ষে আছেন বলেই দেশনায়ক তারেক রহমানকে এতো নির্যাতন নীপিড়ণ সহ্য করতে হয়েছে। জনগণের অধিকারের কথা বলার কারনেই তারেক রহমানকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। তারেক রহমান রহমানকে এই রেজিম ভয় করে কারণ বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমানকে ভরসা করে; তাঁর উপর আস্থা রাখে।
কারাবরণের ৫৫৪ দিন:
এক-এগারোর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন অসাংবিধানিক সরকারের নির্দেশে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারেক রহমানকে আটকের পরে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার জোরদার করা হয়; শুরু হয় অপসাংবাদিকতা। গোটা জাতীকে অন্ধকারে রেখে সাজানো হয় মিথ্যা ও বানোয়াট গল্পের পসরা। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের কর্তৃত্ববাদী সরকার গণতন্ত্র ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করে দিয়ে তারেক রহমানকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের কূট চাল প্রয়োগ করতে থাকে। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে তারেক রহমানকে ধ্বংস করতে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করা শুরু করে। তখন থেকে আজ অবধি রাষ্ট্রশক্তিকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনের পর দিন রিমান্ডের নামে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয় গণতন্ত্রকামী নেতা তারেক রহমানকে। বাংলাদেশের গণমানুষের চেতনাকে ভেঙ্গে দিতেই তারেক রহমানের উপর নির্যাতন শুরু করে এবং তিনি অত্যাচারিত হয়ে খুবই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এমন ক্রান্তিকাল তারেক রহমানকে সহ্য করতে হয়েছে শুধু বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতি অটল থাকার জন্য।

সুনিদৃস্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই বিতর্কিত সেনা সমর্থিত সরকারের নির্দেশে জরুরী বিধিমামলায় তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। যে নেতার বিরুদ্ধে কোথাও একটি জিডি পর্যন্ত ছিলো না। কিন্ত সেনা সমর্থিত সরকার এবং পরবর্তীতে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা সাজিয়ে রায় দেয়া শুরু করেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন তারেক রহমান; ক্ষমতায় থাকতে যিনি সরল জীবনযাপনে অভ্যস্থ ছিলেন এবং তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সাথে দিন। জনাব তরেক রহমান এর রাজনৈতিক চরিত্রের মধ্যে একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট; সেটা হচ্ছে তিনি সাধারণের মতামতকে ধারণ ও লালন করতে সক্ষম। তিনি প্রত্যেক নাগরিককে যথাযথ সম্মান প্রদর্শণে দৃঢ় প্রত্যয়ী। আর সে কারণেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে রেসিজমের ভয় গাঢ় হয়েছে। এই রেসিজম জনগণকে ভয় দেখানোর জন্যই দেশনায়ক তারেক রহমানকে কারাবন্দী করেছিলেন যা এখন আমাদের নিকট দিনের আলোর মতো প্রতিষ্ঠীত।
১/১১-র ষড়যন্ত্রকারীদের মূল টার্গেট ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ও বর্তমান সরকারের পুরো সময়টাতেই রাস্ট্রিয় সর্বশক্তি দিয়ে টাস্কফৌর্স, দুদকসহ সকল সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে দেশে বিদেশে তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদা ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোন অভিযোগ আজ অবধি প্রমাণ করতে পারেনি। দেশনায়ক তারেক রহমানকে বর্তমান সরকারের আমলে একাধিক মামলায় সাজানো আসামী করে দন্ড দিতে বিচারকদের চাপ দেয়ার অভিযোগ বাংলাদেশের জনগণের কাছে প্রমাণিত সত্য। সাজানো মামলায় দ- না দেয়ার জন্য বিচারককেও হয়রানী করা হয়েছে এমন নজিরও বর্তমান সরকার রেখেছে। তারেক রহমানকে দেশ ছাড়তে প্রচ-ভাবে চাপ দেয়া হয়েছিল। তারেক রহমান বাংলাদেশের মানুষের হৃদস্পন্দ এবং তিনি কখনই দেশ ছাড়তে রাজি হননি। ষড়যন্ত্রকারীরা সেদিন জানতেন তারেক রহমান দেশে থাকলে বাংলাদেশটাকে স্বৈরাচারের মসনদ বানানো যাবেনা; ফলে তারেক রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রও করা হয়েছিলো। শরীরে জখমের চিহ্ন আজও আমাদেরকে শিহরিত করে; একটি ভয়ের দুনিয়া নির্মাণ করে নির্যাতনের বিরানভূমি বানিয়ে রেখেছিলো বাংলাদেশ জুড়ে। তারেক রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র আজও করা হয়। তাঁকে তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে অপমৃত্যু দেখানোর চেষ্টাও করা হয়েছিলো। শারিরীক এবং মানসিক নির্যাতনের বিরল ইতিহাস সেদিন তৈরি করা হয়েছিলো। সৃষ্টিকর্তা এবং বাংলাদেশের মানুষের দোয়ায় তারেক রহমান সুস্থ্য আছেন এবং আবার বগণ-মানুষের আস্থার স্থানকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশ এখন তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের দিন গুনছে; বাংলাদেশ মনে করছে তারেক রহমান ফিরবে, সাথে ফিরবে মানুষের অধিকার।
প্রিয় নেতার কারামুক্তি দিবসে আশার সঞ্চারণ ঘটেছে; মুক্তির অনুপ্রেরণায় গণতন্ত্রকামী মানুষ তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনমুখি। মানুষের ভোটের অধিকার ও দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকা- পরিচালনা করতে দেবেন না বলেই তারেক রহমানের ৫৫৪ দিনের কারাবাস এবং এই কারাবাস বাংলাদেশের ইতিহাসে এতোটাই গুরুত্বর্পর্ণ যে এই প্রক্রিয়াটার মধ্য দিয়েই ষড়যন্ত্রকারীরা ফ্যাসিজম জারি রাখতে পেরেছে। আর বাংলাদেশের মানুষ বিশ^াস করে তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবসের অঙ্গিকার গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।

Recent Posts