প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিচ্ছে ডাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক

ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম


স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার করে এসে আজকের দিনেও বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সবথেকে প্রিয় নাম শহীদ জিয়া। বিপ্লবী ‘উই রিভোল্ট’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে তিনি যে হাতে হানাদার পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন, দেশ স্বাধীন করার পর গণমানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সে হাতে শক্ত করে ধরেছিলেন দেশের হাল। তিনি বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক মুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। দেশের মানুষকে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ করে দিতে তিনি চেয়েছিলেন রাজনীতি সবার জন্য উন্মুক্ত হোক।
একদলীয় বাকশাল যখন সবার রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেছিল তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কেউ ছিল না। শহীদ জিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার গ্রহণ করে বুঝেছিলেন দেশের মানুষকে সবার আগে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি দেশী বিদেশী অপশক্তিকে রুখে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে একত্রিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ১৯৭৮ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত গণমানুষের প্রিয় দল বিএনপি আজ শুক্রবার পা রাখতে যাচ্ছে ৪৫ বছরে। দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ।
সৃষ্টিকর্তার উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র সামনে রেখে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীদের ‘সম্মিলিত জোট’ হিসাবে এই দল গঠন করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন মত ও পথের দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের অভিন্ন রাজনৈতিক আচ্ছাদনের নিচে আনতে চেষ্টা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখলেও দেশী বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রে বার বার থমকে যেতে হয়েছে বিএনপিকে।
ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন নেতৃত্বাধীন সরকারের চক্রান্তের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলটিকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে চলেছে নানা ষড়যন্ত্র। এই ভয়ানক দেশ ও মানবতা বিরোধী ষড়যন্ত্র আজও অব্যহত। বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় দল বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের আস্থার ও ভালবাসার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন প্রিয় আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কারণ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সফল হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নেতৃত্ব প্রদানে শহীদ জিয়ার পর তাঁর থেকে সফল আর কেউ হতে পারেননি।
সীমাহীন জনপ্রিয়তাই একটা সময়ে কাল হয়ে যায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। শহীদ জিয়ার সাহসী সিদ্ধান্তগুলো খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া বেগম খালেদা জিয়া নিজের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন আপোসহীন এবং মাথা নত করতে না জানা একজন জননন্দিত নেত্রী হিসেবে। তাঁর এই আত্মসম্মানবোধের পাশাপাশি স্বদেশ ও গণমানুষের প্রতি সীমাহীন ভালবাসা স্বৈরাচারী শক্তির জন্য চরম ভয়ের কারণ। তাই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর স্বৈরতান্ত্রিক অপশক্তি সবার আগে তাঁকে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে। লেজেহুমো এরশাদ থেকে শুরু করে পরবর্তী সব স্বৈরাচার তাই জনগণের দাবি আদায়ের পথ রুদ্ধ করতে সবার আগে কারাবন্দী করেছে আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে।
এরই ধারাবাহিকতায় কুখ্যাত এক এগারোর ষড়যন্ত্র করে প্রথমবার ক্ষমতা দখলের পর দুটি অবৈধ নির্বাচনকে পুঁজি করে ক্ষমতা আরও প্রলম্বিত করা স্বৈরাচার তাঁকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেছে। নানা অযুহাতে জামিন বাতিল করে স্বৈরাচারের পোষ্য আদালত দেশনেত্রীকে দূরে রেখেছে জনগণের থেকে। ফলে প্রতিষ্ঠার পর বিগত প্রায় সাড়ে চার দশকের মধ্যে শেষ এক যুগ বেশ প্রতিকুল সময় পার করছে দেশের জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক দলটি। শর্ত সাপেক্ষ নামমাত্র মুক্তি পেলেও পরিবার থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা, নানাবিধ অসুস্থতা আর বিধিনিষেধের বেড়াজালে দেশনেত্রীকে সব ধরণের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।
পরিস্থিতির দায় মেনে দেশনেত্রীর অনুপস্থিতে অনেকটা বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দলটির হাল ধরেছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। মিথ্যা মামলায় আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করে তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়াতে পারেনি ঘৃণ্য স্বৈরাচার। বরঞ্চ সময়ের আবর্তে তিনি সবার প্রিয় আপোসহীন দেশনেত্রী থেকে আরও সম্মানিত হয়েছেন ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব লাভ করার পর তাঁর সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্ব আবার বিএনপিকে পথ দেখায়। নানাবিধ অপশক্তির সব ষড়যন্ত্রের মুখে তিনি অবস্থান নিয়েছেন পর্বত প্রমাণ দৃঢ়তা নিয়ে। কবি সুকান্ত মনে হয় এজন্যই বলেছিলেন ‘জ¦লে পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’।
এক এগারোর ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্কারবাদী ঘাতকের দুরভিসন্ধির মুখে বেশ ভয়াবহ একটা সময় পার করতে হয়েছে বিএনপিকে। কিন্ত দেশনায়ক তারেক রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশের জনপ্রিয়মত রাজনৈতিক দলটি। তারেক রহমান সবার আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে গনতান্ত্রিক পন্থায় পুনর্গঠিত করেন। তিনি সর্বস্তরে শক্তিশালী পরিকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি নেতা ও কর্মীদের আন্দোলনমুখী অবস্থানে উজ্জীবীত করেন। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর কাজে তিনি অনেকটা সফল হওয়ায় তার সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের মানুষ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে সম্পন্ন হওয়া স্বৈরাচারবিরোধী মহাসমাবেশ প্রমাণ করেছে তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বকে। এই মহাসমাবেশ জানান দিয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিএনপির জন্মই হয়েছে গণমানুষের পাশে থেকে সব প্রতিকূলতা অতিক্রমের জন্য। তাঁর কার্যকর নির্দেশনা ও সুসজ্জিত নেতৃত্বে তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত মিছিল মিটিং সমাবেশের মুখরিত শ্লোগান আর উত্তাল গণ-আন্দোলন পুরো বিশ^কে জানান দিয়েছে এক ইতিবাচক পরিবর্তনের পূর্বাভাস।
এমনি পরিস্থিতিতে স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি আদালতকে ব্যবহার করে দেশনায়ক তারেক রহমানের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে। তারা আদালতকে সামনে রেখে ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে দেশনায়ক তারেক রহমানের বক্তব্য সম্প্রচার বন্ধ করেছিল। এবার তারাই চেষ্টা করছে একটু ভিন্নভাবে। তারা আদালতের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিটিআরসিকে নির্র্দেশ দিয়েছে তারেক রহমানের সব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে দিতে।
সম্প্রতি মূল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ইস্পাত সমান দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির প্রায় ১১টি অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন সুসম্পন্ন হওয়ায় স্বৈরতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তারা সবাই একাত্ম। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরলস প্রচেস্টা ও দিক-নির্দেশনায় দলের সর্বস্তরে এমন গতিশীলতা ফিরে আসায় তা কাঁপন ধরিয়েদিয়েছে জনবিচ্ছিন্ন সরকারকে। একদিকে দেশনায়ক তারেক রহমান প্রায় প্রতিদিন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত থেকে তাদের উপযুক্ত দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। অন্যদিকে তার যোগ্য নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে ঘোষিত ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ সফল করতে একাত্ম হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক জনগণও।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কিন্ত লাগাতার আন্দোলনে টলিয়ে গিয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকারের ভিত্তি। তারা দেশে ও দেশের বাইরে নানমুখী চাপে এখন নতজানু। আপোসহীন দেশনেত্রী গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি, তারেক রহমানের উপর আরোপিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ তাঁর নিরাপদ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করার দাবি এখন সর্বজনীন।
শান্তিপূর্ণভাবে এই কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার একক কৃতিত্ব বিএনপির। তারা দেশনায়ক তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে দেশপ্রেমিক জনগণের মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। নিজের ভোটাধিকার ফিরে পেতে বাংলাদেশের জনগন আজ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। তবে এর জন্য একক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এক অনন্য নজির নিঃসন্দেহে।
আমরা জানি শুধুমাত্র দেশপ্রেমিক জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সবার জন্য বাসযোগ্য ও উন্নত করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তমূলক মিথ্যা মামলায় ফরমায়েসী রায় দিয়ে তাঁকে বছরের পর বছর অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ একজন নারীকে তারা উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। শুধুমাত্র জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অগণিত নেতাকর্মীকে উর্দিধারী দলদাসসহ সরকারি সমর্থনপুষ্ট ইউনিফর্ম ছাড়া নানা ঘাতকের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে। ভোটাধিকার আদায়ের সংগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিদিন যারা মিছিল নিয়ে নামছেন তাদের অনেকে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন নাা। বিভিন্ন সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়ার কারণে নেতাকর্মীদের বাড়িতে ঢুকে তাদের আত্মীস্বজনকে যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। তুচ্ছকারণে নেতাদের বসতবাড়িতে হামলা হচ্ছে। পাশাপাশি ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। প্রায় দেড় হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে।
তবুও দমানো যায়নি বিএনপিকে। তারা রাজপথের সংগ্রামে রক্ত ঝরিয়ে, গুম হয়ে কিংবা সরাসরি লাশ হয়ে প্রমাণ করেছে শহীদ জিয়ার আদর্শ এমনই যা মানুষকে পিছু হটতে শেখায়নি। গণতন্ত্রের মা আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শের সন্তানরা মায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের মর্যাদা জানে। তাই তারা মধ্যরাতের নির্বাচনে গুম হয়ে যাওয়া গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার ফিরে আনতে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়েছে। ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি সব ষড়যন্ত্র পায়ে মাড়িয়ে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে বিএনপি। দেশের কল্যাণকামী হাজার লক্ষ জনতা যখন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে তা সহজেই প্রমাণ করে আরেকটি বিপ্লব আসন্ন।
শপথ মহান ৭ নভেম্বরের। দোহাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে উচ্চারিত ‘উই রিভোল্ট’ কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার দীপ্ত উচ্চারণের। বিগত সাড়ে চার দশকের সংঘাত-বিক্ষোভ, জনপ্রিয়তা আর চড়াই-উৎরাই বিএনপি পুরোপুরি সফলতার সঙ্গে পার করেছে তার সীমাহীন জনপ্রিয়তা নিয়ে।
উন্নয়ন-উৎপাদনের আধুনিক রাজনীতিকে মূল প্রতিপাদ্য করে শহীদ জিয়া যে মহা গুরুত্বপূর্ণ ১৯ দফা কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা এখনও বাংলাদেশের বাস্তবতায় সবচেয়ে যৌক্তিক। তাইতো প্রতিষ্ঠার পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করেছিল। এরপর সব ষড়যন্ত্রকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দল এখনও বিএনপিই। ষড়যন্ত্রীরা দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে হত্যা করেছিল। কিন্ত তারা নিঃশেষ করতে পারেনি তাঁর আদর্শ আর গণমানুষের প্রিয় দল বিএনপিকে। আর তাইতো বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ১৪ বছর। আর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হবার গৌরব অর্জন করেও দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সীমাহীন জজনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়েনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিসিঞ্চারের সেই তলাবিহীন ঝুড়ি কিংবা চুয়াত্তরের সেই দুর্ভিক্ষের দেশ যাই বলেন সেখান থেকে আমার আপনার প্রিয় বাংলাদেশকে শান্তি আর সমৃদ্ধির শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন একজন প্রেসিডেন্ট; তিনি সবার প্রিয় নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, জেড ফোর্সের সর্বাধিনায়ক শহীদ জিয়া। তিনিই বিএনপি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শাপমুক্তি ঘটিয়ে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধোত্তরকালের বাংলাদেশে ভঙ্গুর অর্থনীতির। বিপন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন তিনিই। আর সেখানে সামনে থেকে কাজ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
দেশ, মাটি ও মানুষের উন্নয়নে শুরু থেকেই কাজ করতে থাকা মহান রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়া শুরুতেই প্রথম গ্রহণ করেছেন মানব সম্পদ রপ্তানির দূরদর্শী উদ্যোগ। তাঁর দেখানো পথেই রেমিটেন্স হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ সঞ্চয়ের মূল পাথেয়। স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম দশকে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত দেশের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে গণমানুষকে প্রথমবারের মতো তিনিই দেখিয়েছেন উন্নয়নের অগ্রযাত্রা, স্বনির্ভরতার স্বপ্ন এবং মুক্তির দিশা। আজকের গণতান্ত্রিক এক অর্থে শহীদ জিয়ারই অবদান। আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান যে মহান আদর্শের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়মকামী জনতাকে একত্রিত করেছেন তার মূল কারিগরও ছিলেন শহীদ জিয়াই। আর তাই ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মিলেমিশে অবিচ্ছেদ্য এক নাম। দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাবনত সালাম।
লেখক: অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিচ্ছে ডাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক
ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার করে এসে আজকের দিনেও বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সবথেকে প্রিয় নাম শহীদ জিয়া। বিপ্লবী ‘উই রিভোল্ট’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে তিনি যে হাতে হানাদার পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন, দেশ স্বাধীন করার পর গণমানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সে হাতে শক্ত করে ধরেছিলেন দেশের হাল। তিনি বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক মুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। দেশের মানুষকে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ করে দিতে তিনি চেয়েছিলেন রাজনীতি সবার জন্য উন্মুক্ত হোক।
একদলীয় বাকশাল যখন সবার রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেছিল তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কেউ ছিল না। শহীদ জিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার গ্রহণ করে বুঝেছিলেন দেশের মানুষকে সবার আগে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি দেশী বিদেশী অপশক্তিকে রুখে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে একত্রিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ১৯৭৮ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত গণমানুষের প্রিয় দল বিএনপি আজ শুক্রবার পা রাখতে যাচ্ছে ৪৫ বছরে। দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ।
সৃষ্টিকর্তার উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র সামনে রেখে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীদের ‘সম্মিলিত জোট’ হিসাবে এই দল গঠন করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন মত ও পথের দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের অভিন্ন রাজনৈতিক আচ্ছাদনের নিচে আনতে চেষ্টা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখলেও দেশী বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রে বার বার থমকে যেতে হয়েছে বিএনপিকে।
ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন নেতৃত্বাধীন সরকারের চক্রান্তের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলটিকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে চলেছে নানা ষড়যন্ত্র। এই ভয়ানক দেশ ও মানবতা বিরোধী ষড়যন্ত্র আজও অব্যহত। বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় দল বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের আস্থার ও ভালবাসার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন প্রিয় আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কারণ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সফল হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নেতৃত্ব প্রদানে শহীদ জিয়ার পর তাঁর থেকে সফল আর কেউ হতে পারেননি।
সীমাহীন জনপ্রিয়তাই একটা সময়ে কাল হয়ে যায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। শহীদ জিয়ার সাহসী সিদ্ধান্তগুলো খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া বেগম খালেদা জিয়া নিজের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন আপোসহীন এবং মাথা নত করতে না জানা একজন জননন্দিত নেত্রী হিসেবে। তাঁর এই আত্মসম্মানবোধের পাশাপাশি স্বদেশ ও গণমানুষের প্রতি সীমাহীন ভালবাসা স্বৈরাচারী শক্তির জন্য চরম ভয়ের কারণ। তাই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর স্বৈরতান্ত্রিক অপশক্তি সবার আগে তাঁকে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে। লেজেহুমো এরশাদ থেকে শুরু করে পরবর্তী সব স্বৈরাচার তাই জনগণের দাবি আদায়ের পথ রুদ্ধ করতে সবার আগে কারাবন্দী করেছে আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে।
এরই ধারাবাহিকতায় কুখ্যাত এক এগারোর ষড়যন্ত্র করে প্রথমবার ক্ষমতা দখলের পর দুটি অবৈধ নির্বাচনকে পুঁজি করে ক্ষমতা আরও প্রলম্বিত করা স্বৈরাচার তাঁকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেছে। নানা অযুহাতে জামিন বাতিল করে স্বৈরাচারের পোষ্য আদালত দেশনেত্রীকে দূরে রেখেছে জনগণের থেকে। ফলে প্রতিষ্ঠার পর বিগত প্রায় সাড়ে চার দশকের মধ্যে শেষ এক যুগ বেশ প্রতিকুল সময় পার করছে দেশের জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক দলটি। শর্ত সাপেক্ষ নামমাত্র মুক্তি পেলেও পরিবার থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা, নানাবিধ অসুস্থতা আর বিধিনিষেধের বেড়াজালে দেশনেত্রীকে সব ধরণের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।
পরিস্থিতির দায় মেনে দেশনেত্রীর অনুপস্থিতে অনেকটা বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দলটির হাল ধরেছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। মিথ্যা মামলায় আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করে তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়াতে পারেনি ঘৃণ্য স্বৈরাচার। বরঞ্চ সময়ের আবর্তে তিনি সবার প্রিয় আপোসহীন দেশনেত্রী থেকে আরও সম্মানিত হয়েছেন ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব লাভ করার পর তাঁর সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্ব আবার বিএনপিকে পথ দেখায়। নানাবিধ অপশক্তির সব ষড়যন্ত্রের মুখে তিনি অবস্থান নিয়েছেন পর্বত প্রমাণ দৃঢ়তা নিয়ে। কবি সুকান্ত মনে হয় এজন্যই বলেছিলেন ‘জ¦লে পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’।
এক এগারোর ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্কারবাদী ঘাতকের দুরভিসন্ধির মুখে বেশ ভয়াবহ একটা সময় পার করতে হয়েছে বিএনপিকে। কিন্ত দেশনায়ক তারেক রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশের জনপ্রিয়মত রাজনৈতিক দলটি। তারেক রহমান সবার আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে গনতান্ত্রিক পন্থায় পুনর্গঠিত করেন। তিনি সর্বস্তরে শক্তিশালী পরিকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি নেতা ও কর্মীদের আন্দোলনমুখী অবস্থানে উজ্জীবীত করেন। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর কাজে তিনি অনেকটা সফল হওয়ায় তার সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের মানুষ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে সম্পন্ন হওয়া স্বৈরাচারবিরোধী মহাসমাবেশ প্রমাণ করেছে তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বকে। এই মহাসমাবেশ জানান দিয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিএনপির জন্মই হয়েছে গণমানুষের পাশে থেকে সব প্রতিকূলতা অতিক্রমের জন্য। তাঁর কার্যকর নির্দেশনা ও সুসজ্জিত নেতৃত্বে তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত মিছিল মিটিং সমাবেশের মুখরিত শ্লোগান আর উত্তাল গণ-আন্দোলন পুরো বিশ^কে জানান দিয়েছে এক ইতিবাচক পরিবর্তনের পূর্বাভাস।
এমনি পরিস্থিতিতে স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি আদালতকে ব্যবহার করে দেশনায়ক তারেক রহমানের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে। তারা আদালতকে সামনে রেখে ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে দেশনায়ক তারেক রহমানের বক্তব্য সম্প্রচার বন্ধ করেছিল। এবার তারাই চেষ্টা করছে একটু ভিন্নভাবে। তারা আদালতের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিটিআরসিকে নির্র্দেশ দিয়েছে তারেক রহমানের সব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে দিতে।
সম্প্রতি মূল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ইস্পাত সমান দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির প্রায় ১১টি অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন সুসম্পন্ন হওয়ায় স্বৈরতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তারা সবাই একাত্ম। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরলস প্রচেস্টা ও দিক-নির্দেশনায় দলের সর্বস্তরে এমন গতিশীলতা ফিরে আসায় তা কাঁপন ধরিয়েদিয়েছে জনবিচ্ছিন্ন সরকারকে। একদিকে দেশনায়ক তারেক রহমান প্রায় প্রতিদিন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত থেকে তাদের উপযুক্ত দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। অন্যদিকে তার যোগ্য নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে ঘোষিত ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ সফল করতে একাত্ম হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক জনগণও।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কিন্ত লাগাতার আন্দোলনে টলিয়ে গিয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকারের ভিত্তি। তারা দেশে ও দেশের বাইরে নানমুখী চাপে এখন নতজানু। আপোসহীন দেশনেত্রী গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি, তারেক রহমানের উপর আরোপিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ তাঁর নিরাপদ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করার দাবি এখন সর্বজনীন।
শান্তিপূর্ণভাবে এই কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার একক কৃতিত্ব বিএনপির। তারা দেশনায়ক তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে দেশপ্রেমিক জনগণের মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। নিজের ভোটাধিকার ফিরে পেতে বাংলাদেশের জনগন আজ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। তবে এর জন্য একক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এক অনন্য নজির নিঃসন্দেহে।
আমরা জানি শুধুমাত্র দেশপ্রেমিক জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সবার জন্য বাসযোগ্য ও উন্নত করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তমূলক মিথ্যা মামলায় ফরমায়েসী রায় দিয়ে তাঁকে বছরের পর বছর অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ একজন নারীকে তারা উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। শুধুমাত্র জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অগণিত নেতাকর্মীকে উর্দিধারী দলদাসসহ সরকারি সমর্থনপুষ্ট ইউনিফর্ম ছাড়া নানা ঘাতকের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে। ভোটাধিকার আদায়ের সংগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিদিন যারা মিছিল নিয়ে নামছেন তাদের অনেকে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন নাা। বিভিন্ন সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়ার কারণে নেতাকর্মীদের বাড়িতে ঢুকে তাদের আত্মীস্বজনকে যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। তুচ্ছকারণে নেতাদের বসতবাড়িতে হামলা হচ্ছে। পাশাপাশি ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। প্রায় দেড় হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে।
তবুও দমানো যায়নি বিএনপিকে। তারা রাজপথের সংগ্রামে রক্ত ঝরিয়ে, গুম হয়ে কিংবা সরাসরি লাশ হয়ে প্রমাণ করেছে শহীদ জিয়ার আদর্শ এমনই যা মানুষকে পিছু হটতে শেখায়নি। গণতন্ত্রের মা আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শের সন্তানরা মায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের মর্যাদা জানে। তাই তারা মধ্যরাতের নির্বাচনে গুম হয়ে যাওয়া গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার ফিরে আনতে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়েছে। ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি সব ষড়যন্ত্র পায়ে মাড়িয়ে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে বিএনপি। দেশের কল্যাণকামী হাজার লক্ষ জনতা যখন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে তা সহজেই প্রমাণ করে আরেকটি বিপ্লব আসন্ন।
শপথ মহান ৭ নভেম্বরের। দোহাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে উচ্চারিত ‘উই রিভোল্ট’ কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার দীপ্ত উচ্চারণের। বিগত সাড়ে চার দশকের সংঘাত-বিক্ষোভ, জনপ্রিয়তা আর চড়াই-উৎরাই বিএনপি পুরোপুরি সফলতার সঙ্গে পার করেছে তার সীমাহীন জনপ্রিয়তা নিয়ে।
উন্নয়ন-উৎপাদনের আধুনিক রাজনীতিকে মূল প্রতিপাদ্য করে শহীদ জিয়া যে মহা গুরুত্বপূর্ণ ১৯ দফা কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা এখনও বাংলাদেশের বাস্তবতায় সবচেয়ে যৌক্তিক। তাইতো প্রতিষ্ঠার পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করেছিল। এরপর সব ষড়যন্ত্রকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দল এখনও বিএনপিই। ষড়যন্ত্রীরা দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে হত্যা করেছিল। কিন্ত তারা নিঃশেষ করতে পারেনি তাঁর আদর্শ আর গণমানুষের প্রিয় দল বিএনপিকে। আর তাইতো বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ১৪ বছর। আর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হবার গৌরব অর্জন করেও দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সীমাহীন জজনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়েনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিসিঞ্চারের সেই তলাবিহীন ঝুড়ি কিংবা চুয়াত্তরের সেই দুর্ভিক্ষের দেশ যাই বলেন সেখান থেকে আমার আপনার প্রিয় বাংলাদেশকে শান্তি আর সমৃদ্ধির শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন একজন প্রেসিডেন্ট; তিনি সবার প্রিয় নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, জেড ফোর্সের সর্বাধিনায়ক শহীদ জিয়া। তিনিই বিএনপি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শাপমুক্তি ঘটিয়ে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধোত্তরকালের বাংলাদেশে ভঙ্গুর অর্থনীতির। বিপন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন তিনিই। আর সেখানে সামনে থেকে কাজ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
দেশ, মাটি ও মানুষের উন্নয়নে শুরু থেকেই কাজ করতে থাকা মহান রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়া শুরুতেই প্রথম গ্রহণ করেছেন মানব সম্পদ রপ্তানির দূরদর্শী উদ্যোগ। তাঁর দেখানো পথেই রেমিটেন্স হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ সঞ্চয়ের মূল পাথেয়। স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম দশকে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত দেশের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে গণমানুষকে প্রথমবারের মতো তিনিই দেখিয়েছেন উন্নয়নের অগ্রযাত্রা, স্বনির্ভরতার স্বপ্ন এবং মুক্তির দিশা। আজকের গণতান্ত্রিক এক অর্থে শহীদ জিয়ারই অবদান। আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান যে মহান আদর্শের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়মকামী জনতাকে একত্রিত করেছেন তার মূল কারিগরও ছিলেন শহীদ জিয়াই। আর তাই ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মিলেমিশে অবিচ্ছেদ্য এক নাম। দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাবনত সালাম।


লেখক: অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

Recent Posts