শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমার কাছে গবেষণার বিষয়

প্রকৌশলী মোঃ কামরুল হাসান উজ্জ্বল

বর্তমান সময়ে আমি অনেক কিছুর মধ্যেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও ধর্মের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দ্বারা অনুপ্রাণিত হই এবং খুঁজে বেড়াই যে কোনো সৃষ্টি ও প্রতিষ্ঠার কারণতত্ব। সকল কিছুই কোনো না কোনো পরিকল্পনার অংশবিশেষ; মানুষ পরিকল্পনা করে আর মানুষকে নিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তারও পরিকল্পনা থাকে। আমি কবে কখন প্রথম ভেবেছি তা স্মরণ করে বলতে পারবো না তবে বিষয়টি আমাকে ভাবিয়েছে । এ ভাবনার শুরু অনেক আগে থেকেই যা আজও বহমান।  বিষয়টা কি ? হ্যাঁ তা বলবো; সেটা বলার জন্যই আমার এই প্রবন্ধটি লিখা । এটির একটি পটভূমি রয়েছে। আমি বগুড়া আজিজুল হক কলেজের ছাত্র, এইচএসসি (১৯৯০ সাল) । HSC ক্লাস হতো পুরাতন ভবনে । আমার বাসা ছিল নতুন ভবন সংলঘ্ন বা কামারগাড়ী । SSC পরীক্ষার পর থেকেই নতুন ভবনে নিয়মিত যেতাম, মাঝে মাঝে মিছিল করতাম। কেন মিছিল করতাম বলতে পারব না তবে ভাল লাগত। কোন দলের মিছিল করতাম? আবশই ছাত্রদলের। খাইরুল ভাই, সাইফুল ভাই ও হিরু ভাই আমাদের নেতা ছিলেন ঐ সময়ে, সাইফুল নামে আমার এক বন্ধুও ছিল, তাকে হারিয়েছি  HSC পরীক্ষার পর হতেই আজও পাই নাই। দল হিসাবে ছাত্রদল নির্বাচন করেছিলাম আর এ কাজে আমার বাবার প্রভাব ছিল। বাবা আমাকে বলেছিলেন, “ আওয়ামী লীগ করা যাবে না ”।  কেন আওয়ামী লীগ করা যাবে না তার বিশাল বর্ণনা তিনি আমাকে দিয়েছেন এ বিষয় নিয়েও একটি লেখার ইচ্ছা আছে এবং লিখব । 

বগুড়া আজিজুল হক কলেজে আমার পরিচিত দুই ইয়ারমেট বান্ধবি ছিল,  একজন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সমর্থন করতো, এর মধ্যে একজন ছিল গোরা আওয়ামী লীগ । আমার সাথে মাঝে মাঝে তাদের রাজনৈতিক কথা হতো, প্রায়ই আমাকে একটি কথা বলে দুর্বল করার চেস্টা করত যে,” তার পুরাতন পার্টি, তাদের ঐতিহ্য রয়েছে, তাদের ইতিহাস অনেক বড়”।  তখন আমিও একটি কথা বলে তাদের দুর্বল করার চেস্টা করতাম যে, “সেই পুরাতন দলকে টক্কর মারে আমার দল” । কিন্তু কোন প্রমান দিতে পারছিলাম না। আসলো ১৯৯১ সালের নির্বাচন । আমার সঙ্কা ছিল, ভয়ও ছিল, কি যে হয়। তাদের ঐতিহাসিক পার্টি-কাঠামো,  ঐতিহ্য, তাদের ইতিহাস অনেক বড়, তার সাথে আরও বেশী সংযুক্ত থাকে মিথ্যার ঝুলি ভরা শব্দ গুচ্ছ। যাই হোক আদর্শিক অবস্থান এবং লড়াই দুটোই টিকে রয়েছে।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান । তিনি আমার কাছে সেই কৈশোর থেকেই গবেষণার বিষয় ছিলেন । যখন দেখলাম মাত্র তিন-সারে তিন বছর ক্ষমতায় থাকা একজন ব্যক্তির গড়া দল কিভাবে আওয়ামী লীগের মত পুরাতন একটি দলকে টক্কর মারে । কিভাবে ঝানু ঝানু আওয়ামী লীগের নেতার  সমান্তরালে একটি দলে পরিণত করে । মাত্র সারে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি । কি ছিল মেজর জিয়ার মধ্যে ? যে কিনা বলেছিল ‘‘আমি মেজর জিয়া বলছি’’। কিইবা ছিল বীরউত্তম  জিয়াউর রহমানের মধ্যে ? কি ছিল জেনারেল জিয়ার মধ্যে ? বা কিইবা ছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মধ্যে ?   চিন্তার বিষয়, তার প্রতিটি পদেই অর্থাৎ মেজর জিয়া, মুক্তিযুদ্ধের বীরউত্তম জিয়া, জেনারেল জিয়া ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিষয় বিস্তর  গবেষণার প্রয়োজন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। গবেষণার বিষয় ছিল আমার কাছে তখনও বা এখনও । আমার ক্ষুদ্র ব্রেনে ও সীমাবদ্ধ জ্ঞানে কিছু কিছু বিষয় খুঁজে পেয়েছিলাম বা আজও পাচ্ছি যার কারণে মাত্র অল্পদিন ক্ষমতায় থাকা একটি ব্যক্তির আদর্শে গড়া দল সবচেয়ে পুরাতন অভিজ্ঞ ও জটিল দলের সমান্তরাল দলে পরিণত হয়েছে । আমার লিখার বিষয়বস্তু ওটাই। আমি প্রথম যে বিষয়টি আলোচনা করবো যা আমার আগের প্রাপ্ত বিষয়গুলোর থেকে একটু আলাদা, একেবারেই আলাদা । আমি আমার দৃষ্টিতে প্রাপ্ত প্রতিটি মানদণ্ড নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। আসলে এককেজি বাটকারা দিয়ে ৫০০ কেজির একটি পাথর কি মাপা সম্ভব ? সম্ভব না । আমার ব্রাইন আমার নিকট  এককেজি বাটকারা  জিয়াউর রহমানের  তুলনায় । তারপরও আমার ক্ষুদ্র চেষ্টা ।

আমি একজন বিজ্ঞানের ছাত্র। পদার্থ ও অপদার্থ আমি ভাল বুঝি । যে বস্তুর  ধর্ম থাকবে সেই পদার্থ  অর্থাৎ পদার্থ মানেই তার কিছু নির্দিষ্ট গুণ থাকবে, থাকবে কিছু সুবিধা আর অসুবিধা । যে বস্তুর  ধর্ম থাকবে না সেই অপদার্থ, পদার্থের বিপরীত অর্থাৎ যার কোন ধর্ম নাই । আমাদের সমাজে অপদার্থ একটি গালি। পদার্থ বা অপদার্থ বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোয্য । মানব জাতির ক্ষেত্রে পদার্থ বা অপদার্থ শব্দের প্রয়োগ সঠিক নয় । মানব জাতি সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মের আওতায় সমগ্র মানব জাতি । এ পৃথিবীতে সকল ধর্মেরই মূল কথা মানব কল্যাণ । বলা চলে মানব কল্যাণই ধর্ম । বস্তুর ধর্মের মত মানুষেরও ধর্ম রয়েছে। যে মানব ধর্ম মানে তাকে বলা হয় আস্তিক আর  যে মানব ধর্ম মানে তাকে বলা হয় নাস্তিক।  আস্তিক শব্দের আর একটি শব্দ রয়েছে যা হলো ধার্মিক । আস্তিক ও ধার্মিক শব্দের সুন্দর ব্যবহার রয়েছে । যে কোন ধর্মের সকল ধার্মিক মানেই আস্তিক কিন্তু আস্তিক মানেই ধার্মিক নয় । আস্তিকের বিষয়াদি থাকে মনে প্রাণে-অদৃশ্য ।  ধার্মিকের ক্ষেত্রেও আস্তিকদের বিষয়াদির সাথে যুক্ত হয় দৃশ্যমান কিছু ধর্মীয় কর্মকান্ড ।

মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য করা সৃষ্টির সেরা ধর্ম । মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য দিয়েছেন ধর্ম। যারা সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য  করে তারাই আস্তিক আর যারা আনুগত্য করে না তারা নাস্তিক । সৃষ্টিকর্তার  মানব ধর্ম সৃস্টির অন্যতম লক্ষ্য মানব কল্যাণ । এই মানব কল্যাণের কাজ নাস্তিকরাও করে আবার আস্তিকরাও করে । নাস্তিকরা তাদের ভাল কাজের পুরুস্কার পেয়ে থাকেন পৃথিবীতেই যতদিন বেঁচে থাকেন ততদিন তারপর হারিয়ে যায় দলবলসহ আর আস্তিকরা? পৃথিবী থেকে চলে গেলেও থেকে যায় তাদের আদর্শ ।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু যে আস্তিক ছিলেন বিষয়টি তা নয় উনি ধার্মিকও ছিলেন। এদেশের ইতিহাসে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি ছিলেন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ব্যক্তি,পারিবারিক,সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় জীবনে আস্তিক ও ধার্মিক মানুষের প্রয়োজন ও গুরুত্ব অপরিসীম । শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন । একজন মুসলমান হিসাবে তাঁর উপর প্রতিদিনের ধর্মীয় নির্দেশনা তিনি মেনে চলতেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন।

ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে মানবিক চিন্তার দ্বার উন্মুক্ত হয়, সাহসিকতার সাথে অন্যায়ের মোকাবিলা করার শক্তি তৈরি হয়; সততা ও নৈতিকতার একটি মজবুত ভীত তৈরি হতে সহায়তা করে। আর এই কারণেই জিয়াউর রহমান ছিলেন বিনয়ী, সৎ এবং আদর্শের প্রতি হিমালয়ের মতো অটল।

মানব কল্যাণে নিয়োজিত কোন বান্দা যদি ধার্মিক হোন তাহলে তার প্রতিদান চলমান থাকে। আওয়ামী প্রপাকাণ্ডার মাঝে আজও জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত কোটি কোটি  মানুষ নিজের জীবন বলিদান করতে প্রস্তুত শুধুমাত্র তাঁর আদর্শিক অবস্থান ও সততার কারণে। আজও আওয়ামী লীগের বিপরীতে পাহাড়ের ন্যায় দাড়িয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল । জিয়াউর রহমানের আস্তিকতা, ধার্মিকতার পুরস্কার মহান সৃষ্টিকর্তা আগেই নির্ধারণ করে রেখেছিলেন বলেই ‘‘আমি মেজর জিয়া বলছি’’ বলার সুযোগ দিয়েছিলেন। শুরুতে বলেছিলাম “মানুষ পরিকল্পনা করে দুনিয়া নিয়ে আর মানুষকে নিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তারও পরিকল্পনা থাকে। “ মহান সৃষ্টিকর্তার সব জানেন। অত্যাচারী পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ যে বাক্তি বা দলের হাতে পড়েছে সে আরেক অত্যাচারী, সে মিথ্যার আশ্রয়ে থাকা, অসৎ, অযোগ্য ও অমানবিক শাসক শ্রেণী। এই অযোগ্য শ্রেণীর বিপরীতে একটি যোগ্য শ্রেণী, সৎ শ্রেণী মহান সৃষ্টিকর্তাই নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যকারী ধর্মপ্রাণ জিয়াউর

৭ নভেম্বরে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যকারী ধর্মপ্রাণ জিয়াকে সত্য এবং ন্যায়ের প্রতীক হিসাবে আবার নির্ধারণ করেছিলেন বাংলাদেশের জনগণ। আর তাই বিএনপির গভীরতা বুঝতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে মেজর জিয়াকে, বিএনপির গভীরতা বুঝতে হলে বীরউত্তম জিয়াকে উপলব্ধি করতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হলে জেনারেল জিয়ার রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বিএনপি জাতীয়তাবাদী আদর্শের দল; একজন জাতীয়তাবাদী সৈনিক অনেক বেশী উদার চিন্তা চর্চাকে ধারণ ও লালন করতে পারে। নাস্তিকতা কখনই সুস্থ্য ধারার সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা; যা সবসময়ই একটি আক্রমনাত্বক জীবন ব্যবস্থা বা সমাজ নির্মাণ করে। আর তাই ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে জাতীয়তাবাদী আদর্শ দ্বারাই জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেছেন একটি ভুখণ্ডের সকল মানুষের নেতা। বিএনপির গভীরতা জমিন ছাড়িয়ে প্রতিটি জাতীয়তাবাদী হৃদয়ের গভীরে ঠাই নিয়েছে।

Recent Posts