মুক্তিযুদ্ধ ও রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম

সাদেক আহমেদ খান

বাঙ্গালীর হাজার বছরের লড়াই ও সংগ্রামের পথ বেয়ে ১৯৭১ সাল এই জাতির জীবনে নিয়ে এসেছিল মুক্তির এক নতুন উন্মাদনা। পাকিস্তানী শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সেদিন দলমত নির্বিশেষে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলেছিল স্বাধীনতা প্রিয় দেশবাসী। জাতীয় নির্বাচনসহ সকল প্রকার প্রতিকুলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে এনে যখন সমগ্রজাতি মুক্তির নেশায় পাগল তখনই পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী শুরু করে এক ঘৃণ্য, পৈচাশিক ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তৎকালীন জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী বাঙ্গালীর নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনার নামে কালক্ষেপনের ফাঁকেই তারা পাক সেনাদের প্রস্তুত করতে থাকে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাÐ সংঘটিত করার কাজ। সকল প্রকার নৈতিকতা ও মানবতাকে বির্সজন দিয়ে ২৫ শে মার্চ রাতে ঘুমন্ত বাঙ্গালী জাতির উপর পাক হানাদার বাহিনী সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পরে এবং অনুষ্ঠিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর ও নিষ্ঠুর হত্যাকাÐ। সেই রাতেই তৎকালীন ই পি আর হেড কোর্য়াটার পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলষ্টেশন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চক বাজার, ঢাকার বস্তিগুলোসহ সারা ঢাকা শহরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হাজার হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙ্গালীদের হত্যা করেছিল।এদের হত্যাযজ্ঞ থেকে সেদিন নারী ও শিশুরাও রেহাই পায় নি। অগ্নিসংযোগ করে এক মহাভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এভাবেই তারা নিষ্ঠুর অমানবিক দমন-পীড়নের মাধ্যম আমাদের কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা চালায়। আক্রান্ত হয়ে যখন সমস্ত স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিক জনগন দিশেহারা, সকল রাজনৈতিক নেতারা যখন জীবন বাঁচানোর জন্য ভয়ে কম্পমান ঠিক তখনই চট্টগ্রাম থেকে ইথারে ভেসে এল এক সাহসী সৈনিকের কণ্ঠস্বর-“আমি মেজর জিয়া বলছি………….। (ডব জবাড়ষঃ—–)
অজানা অচেনা সেই কণ্ঠস্বরে জাতি হলো আলোড়িত শিহরিত। মহুর্তেই আপন হয়ে উঠলেন এই অচেনা মানুষটি। এই ঘোষণার সাথে সাথেই যুবক, তরুন, ছাত্র-জনতার রক্তে বেঁজে উঠলো যুদ্ধের দামামা। ঘুরে দাড়ালো সমগ্র জাতি। সমগ্র স্বাধীনতা প্রিয় জনগোষ্ঠী খুঁজে পেলো তাদের বিশ্বাস। একটি বেসামরিক ¯েøাগান মুখর জাতির হাতে উঠে এলো যুদ্ধের শাণিত অস্ত্র। শুরু হলো সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধকালীন সময়ে জুলাই মাসে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে ১ম, ২য় ও ৮ম ব্যাটালিয়ানের সদস্যদের নিয়ে মেঘালয়ের তেলঢালায় গঠিত হয় দুর্ধষ ব্রিগেড ‘জেড ফোর্স’। মেজর জিয়াউর রহমান এর নের্তৃত্বে এই বিগ্রেড বৃহত্তর মযমুসসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন রণাঙ্গনে অতুলনীয় শৌর্যর্বীয প্রদশন করে গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বাপেক্ষা অধিক সংখ্যক এধষষধহঃৎু ধধিৎফ (বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক) অর্জন করে এই জেড ফোর্স। যেমন সবোচ্চ সংখ্যক পদক অর্জনকারী তেমনি আত্মত্যাগ ও শাহদাত বরণকারীর সংখ্যাও সর্বাধিক ছিল এই জেড ফোর্সের।
স্বাধীনতা অর্জনের সাথে সাথেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সামরিক নেতৃত্বের প্রতি অকুণ্ঠ আনুগত্য প্রদর্শন করে দেশ পুর্নগঠনে তিনি মনোনিবেশ করেন।
স্বাধীনতা অর্জনের পর আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জনগণের প্রত্যাশা, বিশ্বাস, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। ক্ষমতার উন্মাদনা ও লুটেরা মনোবৃত্তির কারনে জাতীয় অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়। শতাব্দীর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশ হয়েছিল বিপন্ন। অবাধ হত্যাকাÐের লীলাভূমিতে বাংলাদেশ হয়ে উঠে বিভীষিকাময় এক মৃত্যু উপত্যকা। সেই ব্যর্থ, নিষ্ঠুর শাসকরা সর্বশেষ গণতন্ত্রের গলা টিপে হত্যা করে কায়েম করেছিল একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন বিতর্কিত আওয়ামীলীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ। আওয়ামীলীগের দুই একজন বাদে অধিকাংশ নেতা সেই সরকারের মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। নিজেদের খেয়াল খুশিমত তারা দেশ জুড়ে জারি করে সামরিক শাসন। যুদ্ধ বিজয়ী বাংলাদেশকে নিয়ে শুরু হয় অশুভ আওয়ামী চক্রান্ত। এমতাবস্থায় ০৩ রা নভেম্বর বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এর নের্তৃত্বে আরেক সেনা অভ্যুত্থান হয়। মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে বন্দি করে তারা ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত হয়।

৭ই নভেম্বর প্রথম প্রহর থেকেই সারা দেশের সেনা ছাউনি থেকে সাধারণ সৈনিকেরা বেরিয়ে আসে অস্ত্র হাতে। বন্ধি সেনা প্রধান জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করে তারা নেমে আসে ঢাকার রাজপথে। সাথে সাথে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক মানুষ রাজপথে বেরিয়ে এসে তাদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে ¯েøাগানে ¯েøাগানে মুখরিত করে তোলে ঢাকার রাজপথ। প্রকাশ্য রাজপথে লাখো সৈনিক জনতার পুষ্পবর্ষনে রাষ্ট্রক্ষমতায় অভিষেক ঘটে শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের।

ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এই দেশপ্রেমিক কর্মপাগল মানুষটির হাত ধরেই উঠে দাড়ায় বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই সমস্ত পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে তিনি দাগ কেটেছিলেন। আধুনিক ও উন্নত বাংলদেশ প্রতিষ্ঠায় তিনিই ছিলেন অগ্রদূত। তার মহা কর্মযজ্ঞ ও সাড়ে তিন বছরের রাজনীতিই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ৭০ বছরের রাজনীতিকে মোকাবেলা করে চলছে আজ অবধি।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সকলেই অবগত। বহু কাঙ্খিত গণতন্ত্র আজ নির্বসিত। মানুষের মৌলিক অধিকার আজ ভূলণ্ঠিত। সকল ভিন্নমত দমনে হত্যা, গুম ও খুন আজ নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। ধর্ষণ, নারী ও শিশু হত্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠন আজ স্বাভাবিক ঘটনা। সমগ্র জনগোষ্ঠী আজ চরম নিরাপত্তাহীন। আমাদের রক্ত¯œাত স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। এই অবস্থা উত্তরণে আজ শহীদ জিয়াউর রহমান এর মত একজন দেশপ্রেমিক বিচক্ষণ নেতার আগমনের অপেক্ষায় সমগ্র বাংলাদেশ। আমাদের বিশ্বাস বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, বাংলদেশের দেশপ্রেমিক জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচক্ষণ নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য সন্তান বর্তমান সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার জনাব তারেক রহমান জনগণের সেই চাহিদা পুরণে অচিরেই আর্বিভূত হবেন। আমরা তার প্রতিক্ষায় রইলাম।

লেখকঃ সাদেক আহমেদ খান, সাধারণ সম্পাদক
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল-কেন্দ্রীয় কমিটি।

Recent Posts