ড. এমাজউদ্দীন আহমদ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পূর্বমুখী হওয়া অথবা পূর্বদিগন্তের উন্মোচন করা নতুন নয়, নয় বৈপ্লবিক কোনো পদক্ষেপও। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসমষ্টির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, বাংলাদেশের পশ্চিম পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত রাষ্ট্রগুলোর বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থা, জাতীয় নিরাপত্তার দাবি এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জরুরি চাহিদার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পূর্বমুখী নীতি স্বাভাবিক এবং কাক্সিক্ষতও বটে।
কাক্সিক্ষত বলছি এই জন্য যে, একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বের যে ক’টি দেশ অর্থনীতি ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করবে তাদের অধিকাংশই অবস্থিত বাংলাদেশের পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের পরবর্তী পর্যায়ে যে চারটি বৃহৎ অর্থনীতি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হয়ে উঠবে অর্থাৎ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত, তাদের একটি বাংলাদেশের পশ্চিম-উত্তরে, কিন্তু দুটির অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে। বিশ্ব ব্যাংকের ওই হিসাব অনুযায়ী যে দশটি অর্থনীতি বিশ্বময় মাথা উঁচু করবে অর্থাৎ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফ্যান্স, জার্মানি ও তাইওয়ান, তাদের সাতটিই এশিয়া মহাদেশের এবং ছয়টির অবস্থান বাংলাদেশের পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে। শুধু একটির অবস্থান পশ্চিমে আর তিনটি বহুদূরের, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের। অন্যদিকে দৃষ্টি না দিয়ে শুধু অর্থনৈতিক অগ্রগতির এই মহাসমারোহে শামিল হওয়ার তাগিদেই বাংলাদেশের মুখ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে ফেরাতে হবে। আর এদিক থেকেও বাংলাদেশের পূর্বমুখী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। গত শতকে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর ক্ষমতা-দ্ব›েদ্বর প্রতিযোগিতার সাক্ষী যেমন ছিল ভ‚মধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর, একুশ শতকে কিন্তু তেমনি প্রতিযোগিতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে ভারত মহাসাগ, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা এবং বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ভারত মহাসাগর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের উপক‚লে। বাংলাদেশ একদিকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ বিন্দুতুল্য। অনেকটা হাইফেনের মতো। বাংলাদেশের এই কৌশলগত অবস্থান দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং কালক্রমে তা রূপান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশের গন্তব্য কোন দিকে তা যদি বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশারদ ও অর্থনীতির পÐিতরা অনুধাবনে ব্যর্থ হন তাহলে বাংলাদেশ যে ব্যাকওয়াটারে অবস্থান করছিল সেখানেই পড়ে থাকতে হবে অর্থাৎ অখ্যাত দক্ষিণ এশিয়ার প্রান্তসীমায় অবস্থিত এক প্রান্তিক রাষ্ট্র (গধৎমরহধষরুবফ) হিসেবে।
পূর্বেই বলেছি, বাংলাদেশের পূর্বমুখী হওয়া নয় কোনো বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ। বাংলাদেশের কৃতী রাষ্ট্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম বাংলাদেশের এই কৌশলগত অবস্থান সম্পর্কে সচকিত হন। তিনি ‘আমাদের পথ’ শীর্ষক এক নিবন্ধে নিজেই লিখেছেন : ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই। উপমহাদেশ এবং এই অঞ্চলের মানচিত্রের দিকে তাকালে এটা স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের বিশেষ একটি গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ এই উপমহাদেশের এ অঞ্চলে সামরিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। এর উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বত আর দক্ষিণে সুগভীর বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার যোগসূত্র স্থাপন করে রেখেছে বাংলাদেশ তার আপন ভ‚খÐের বৈচিত্র্য দিয়ে।
এই যোগসূত্রের সঠিক ব্যবহার হলে আজ বাংলাদেশ যে পর্যায় রয়েছে তার বৈপ্লবিক পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বাংলাদেশ পূর্বমুখী হলে অবিলম্বে প্রক্ষিপ্ত হবে রাজনৈতিক দিক থেকে প্রাণবন্ত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গতিশীল এক এলাকায়। আধিপত্য-আগত্যের (উড়সরহধহপব-উবঢ়বহফবহপব) সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে সম-সার্বভৌমত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ অগ্রস হতে পারবে অগ্রগতির বিস্তীর্ণ মোহনায়। চীনের ইউনান প্রদেশ, মিয়ানমার, ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি প্রদেশের সঙ্গে সশ্লিষ্ট হলে সম্ভাবনার শত বাতায়ন উন্মুক্ত হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে লাওস, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের শেষ প্রান্ত ছাড়িয়ে সমগ্র পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ পৌঁছে যেতে পারে। এই এলাকায় বিনিয়োগ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভ‚তপূর্ব উন্নতি সাধিত হতে পারে। এসব অঞ্চলের সম্পদের বৃদ্ধি ঘটতে পারে প্রচুর পরিমাণে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির তীর ঘেঁষে রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে।
বাংলাদেশ পূর্বমুখী হলে এবং সার্থকভাবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হলে আমাদের প্রতিবেশি বিরাট ভারতের ওপর যে স্বভাবজাত আনুগত্যের প্রবণতা বিদ্যমান তা থেকে অব্যাহতি লাভও সম্ভব হবে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। বিষয়টিকে বিশেষভাবে ব্যাখ্যা না করেও শুধু এটুকু বলতে চাই, ভারত তার বিরাট প্রতিদ্ব›দ্বীরূপে চীনকে খাড়া করে ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের রাষ্ট্রগুলোকে-নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশকে যেভাবে তার নিরাপত্তার লক্ষ্যে নিজ সীমানার বর্ধিতাংশরূপে ব্যবহারে মনোযোগী হয়েছে এবং এ জন্য তার প্রভাব বলয়ের মধ্যে রাখতে সংকল্পবদ্ধ রয়েছে, সে প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে সুষম সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। এর কোনো বিকল্প নেই।
কিন্তু বাংলাদেশের পূর্বমুখী হওয়ার পথটি তেমন মসৃণ নয়। এ পথ বড় বন্ধুর। তাই অত্যন্ত সাবধানে এ পথে চলতে হবে। এর কারণ বহুবিধ : এক. বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত চায় না বাংলাদেশ পূর্বমুখী হোক, কেননা তাতে বাংলাদেশ তার প্রভাব বলয় থেকে ছিটকে যাচ্ছে বলে ভারত আশঙ্কা করবে। দুই. ভারতও তার অর্থনৈতিক কর্মকাÐকে আরও গতিশীল করার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব ভারত থেকে মিয়ানমারে নেয়ার ভারতীয় অভিসন্দিতে তার প্রতিফলন সুস্পষ্ট। তিন. ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে অবস্থিত রাষ্ট্রগুলোকে ভারত যেকোনো সংকটকালে যেভাবে ‘সীমাহীন’ (ইড়ৎফবৎষবংং) এলাকারূপে পরিগণিত করার পরিকল্পনা করেছে তা ব্যাহত হবে। চার. চীন সম্পর্কে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহমত যেভাবে দিন দিন সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে তাও এক্ষেত্রে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো।
এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারকে অত্যন্ত সাবধানে পা ফেলতে হবে এবং এক্ষেত্রে যিনি পথিকৃৎ সেই কৃতী রাষ্ট্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রদর্শিত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে হয়। তার তিক্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে এক দিননির্দেশকের ভ‚মিকা পালন করবে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতা বিপ্লবের উত্তাল তরঙ্গের প্রবল টানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি অনুভব করেন প্রতিবেশী ভারতের বিরাটত্ব এবং তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি, বাংলাদেশের প্রতি তার বৈরীভাব, বাংলাদেশের একাকিত্ব প্রভৃতি। এসব শুধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য নয়, তার সার্বভৌম অবস্থানের প্রতিও এক বিরাট হুমকিস্বরূপ। আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গার ওপর ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ ও একতরফাভাবে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার, দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইঙ্গিতে কিছু বাংলাদেশির সরকারবিরোধী অপতৎপরতা, দেশের স্থিতিশীল অবস্থার ওপর মারাত্বক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্রমগুলোর সভায়, এমনকি ওই বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩১তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বিশ্ব জনমতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল। শেষ পর্যায়ে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ কনফারেন্সে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ব্যক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যার সুরাহা হয়। ১৯৭৭ সালের নভেম্বরে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং বাংলাদেশের বিপথগামীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এসব ঘটনাক্রমের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ধারণা দৃঢ় হয়ে ওঠে কয়েকটি বিষয়ে। এক. প্রতিবেশী বিরাট ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষমূলক সম্পর্ক অথবা নির্ভরশীলতার সম্পর্কের পরিবর্তে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য হলো গঠনমূলক সহযোগিতার সম্পর্ক। দুই. এজন্য অপরিহার্য হলো জাতীয় পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং দলমত নির্বিশেষে জাতীয় স্বার্থ অর্জনের জাতীয় পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং দলমত নির্বিশেষে জাতীয় স্বার্থ অর্জনের লক্ষ্যে জাতিকে সচেতন করে তোলা। তিন. জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বহুমুখী (উরাবৎংরভরপধঃরড়হ ড়ভ রহঃবৎহধঃরড়হধষ ৎবষধঃরড়হং) করা। চার. আন্তঃরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমস্যা যতই প্রকট হোক না কেন, সরকার প্রধানদের সম্মিলিত হওয়ার নিয়মিত ফোরাম বা সংগঠন একান্ত প্রয়োজনীয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রমান এরপর থেকে তার কর্মপ্রবাহকে এসব খাতেই প্রবাহিত করেছিলেন। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে তিনি উদারনীতি গ্রহণ করে ডান বা এবং কেন্দ্র থেকে নেতাকর্মী সংগ্রহ করে জাতিতত্তে¡র প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো সফর করে প্রত্যেক প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভারতের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের জন্য দিল্লি সফর করেন এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্বাভাবিক করার পরেই তিনি চীন, থাইল্যান্ড, বার্মা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হন। মোট কথা, তার প্রক্রিয়া ছিল: প্রথমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় একাগ্রতা। দ্বিতীয়, তিনি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পরেই আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হন। সবশেষে, তিনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন।
বেগম খালেদা জিয়াকেও একই পথ এবং একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অগ্রসর হতে হবে। তা না হলে তার মহৎ উদ্যোগ সফল নাও হতে পারে। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা একান্তভাবে জরুরি। জরুরি বিভিন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে কাছে টেনে নিয়ে তাদের মনে বাংলাদেশ সম্পর্কে আস্থার ভাব সৃষ্টি করা। বাংলাদেশের পূর্বমুখী হওয়া যে প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতিক‚ল নয় তা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে-বুঝিয়ে বাংলাদেশের পূর্বমুখী হওয়া প্রয়োজন। এর কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়াও রাজনৈতিক বা নিরাপত্তার বিষয়ে যে পরিমাণ বিতর্কের তাপ সৃষ্টি হতে পারে, অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে সে পরিমাণ হবে তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে অর্থনৈতিক বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়ে অগ্রসর হলে বাংলাদেশের অত্যন্তরে কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। এক. পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় গণতন্ত্রের কার্যকারিতা সম্পর্কে নানাজন নানা প্রশ্নের অবতারণা করলেও ওইসব দেশে আইন-শৃঙ্খলার যে মান তা অত্যন্ত উন্নত। উন্নত বলেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বিনিয়োগ হয় তা হয়েছে নিশ্চিত এবং ফলপ্রসূ। কর্মকাÐ সম্পন্ন হয় এক নিশ্চিত পরিবেশে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নেই বললেই চলে। কোনো পরিকল্পনা পেশ করলে অথবা কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য হাজারও ঘাটে বিনিয়োগকারীকে ছোটাছুটি করতে হয় না। বাংলাদেশে কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মাত্রা অনেক উঁচু। এদেশে আমলাদের কাজই হলো প্রতি পদে বাধার সৃষ্টি করা। এর অবসান হতে হবে। তিন. দুর্নীতি বিশ্বের সর্বত্রই কম-বেশি প্রচলিত। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্নীতি হয়ে উঠেছে সর্বগ্রাসী। তাই বাংলাদেশে দুর্নীতির পরিমাণকে প্রচুর পরিমাণে হ্রাস করতে না পারলে বহির্বিশ্বে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে।
এমনি সবদিক বিবেচনা করে প্রথমে অর্থনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হলে, পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাÐের মাধ্যমে সৃষ্টি আস্থার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়কে সামনে আনলে, বাংলাদেশের পূর্বমুখী অভিযান সফল হতে বাধ্য। জাতি এক্ষেত্রে সাফল্যকে অভিনন্দিত করার আশায় প্রহর গুনছে।