প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত মোঃ শামীম
অপারেশন সার্চ লাইটের ভয়াল রাতে, খুনে মেজাজে থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বজ্রকঠিন সেই ‘উই রিভোল্ট’ থেকে জেড ফোর্স আর সেক্টর ১, জনতার জিয়া স্বাধীন করেছেন প্রিয় স্বদেশ। আমরা পেয়েছি ‘লাল সবুজের বাংলাদেশ’। তারপর দেশের ক্রান্তিকালে সিপাহী জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে মহান ৭ নভেম্বরের জন্ম দিয়েছিলেন সেখানেও আস্থার প্রাতীক ছিলেন তিনি।
শহিদ জিয়া তাঁর প্রিয় সেই ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ/ আমার মরণ বাংলাদেশ,’ গানটিকে সামনে রেখে আমজনতার চূড়ান্ত আস্থার উপযুক্ত প্রতিদান দিতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি অনুর্বরতা, খরা আর মঙ্গার দেশকে সবুজ শ্যামল করে তুলতে নিয়েছিলেন কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ। তাঁর গৃহীত উদ্যোগের ধারাবাহিক সফলতায় প্রকৃত অর্থে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক পদবন্ধটি স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ধরা দিয়েছিল। আর সেই গানটিও ঠিক এভাবে পেয়েছিল তার পূর্ণতা ‘মাটির মমতায় ঘাস ফসলে, /সবুজের আল্পনা,/ আমার তাতেই হয়েছে/ স্বপ্নের বীজবোনা।’
১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল মূলত বাংলাদেশের কৃষিখাতে এক নবযুগের সূচনা হয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশকে কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলেও বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য ঘাটতি ছিল নিত্য সঙ্গী। দেশীয় পর্যায়ে উৎপাদিত ও কৃষিজাত পণ্যের মাধ্যমে মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা মোটেও সম্ভব হতো না তখন। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই ফি বছর বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতো।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন এই ত্রিশঙ্কু থেকে বাংলাদেশের মানুষের শাপমুক্তি ঘটুক। কারণ তিনি বুঝেছিলেন একদিক থেকে কৃষি ও কৃষকের রূগ্নদশা, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে কৃষিপণ্য ক্রয় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্রমশ ভঙ্গুর করে দিচ্ছিল। একজন জনবান্ধব শাসক হিসেবে তিনি এই অচলাবস্থা থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করার অবলম্বন হিসেবে কৃষিকে বেছে নিয়েছিলেন।
জনগণের এই প্রিয় নেতা খুব সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন কৃষি উন্নয়ন বাদে বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন এবং দারিদ্র বিমোচন সম্ভব নয়। তাই তিনি বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই খাতটি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর গৃহীত এসব উদ্যেগের কারণেই বুভুক্ষু বাংলাদেশ পেয়েছিল খাবারের পরিপূর্ণতা, এমনকি রফতানিও করা হয়েছিল অনেক কৃষি পন্য।
প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার খাদ্যশস্য আমদানি দেশের অর্থনীতিকে যেভাবে চেপে ধরেছিল, তিনি চেয়েছিলেন সবার আগে এই ভয়াবহ দশা থেকে মুক্তি পেতে। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন কৃষিতে স্বয়ম্ভর হতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে যে কোনও সংকট সহজে কাটিয়ে তোলা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে যেমন চাঙ্গা করে তোলা সম্ভব। তেমনি দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্রের মোকাবেলায় অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বীকৃত রূপরেখা হিসেবে পরিচিতি যুগান্তকারী ১৯ দফার ৫ নম্বর দফাতে তিনি সরাসরি উল্লেখ করেছিলেন কৃষি উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা। এখানে সরাসরি উল্লেখ করা হয় ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা’। ঠিক এর পরের দফাতেই তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ করা এবং কেউ যেন ভুখা না থাকে তার ব্যবস্থা করা’। বাস্তবে তাঁর যুগান্তকারী ১৯ দফার ৫ এবং ৬ নং দফা পরস্পর সম্পর্কিত এবং পুরোপুরি কৃষিনির্ভর চিন্তা থেকে প্রদান করা হয়েছিল।
আর এভাবেই দেশ মাটি ও মানুষের প্রিয় এই নেতা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা, মহকুমা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে কৃষি উন্নয়নকে সফল করতে পেরেছিলেন। ‘বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতি’ আর ‘সাধারণ জনগণের উন্নত জীবন’ শীর্ষক পদবদ্ধগুলো যতবার উচ্চারণ করা হবে সেখানে তাই পরম শ্রদ্ধাভরে সবার আগে উচারণ করতে হবে একটি নাম, তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
১৯৮১ সালের ৩০ মে কাল রাতে তাঁর শাহাদাত বরণের মধ্য দিয়ে থমকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর আদর্শ ধারণ করে জাতিকে যখন মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন গণমানুষের মুক্তির জন্য। বাংলাদেশের এই মহানায়কের শাহাদাতের দিনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।