আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস

শাহরিয়া ইসলাম শায়লা

আজ ২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নানা কারণে এই দিনটি বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে তাৎপর্য্যপূর্ণ। প্রথমতঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই বাঙ্গালী জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করে আসছে, নানা ঘটনার পরিক্রমার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে বাঙ্গালীদের আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠতে থাকে। ২৬ র্মাচ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত আনন্দের নাম। ২৬ মার্চ বিশ্বের বুকে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে প্রাপ্ত আইনসঙ্গত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শুরু করেছিল সারাদেশে গণহত্যা। সেই রাতে হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। ২৫ মার্চ রাতেই পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ, সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। মহান সেই স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবেসে অগণিত শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিক অভিনন্দন।
৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানে দেয়া বঙ্গবন্ধুর সেই অগ্নিঝরা ভাষণ প্রতিটি স্বাধীনতাকামী মানুষকে প্রতি মুহুর্তে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে থাকে।
২৫শে মার্চের ভয়াল সেই কালো রাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা যখন এদেশের নিরস্ত্র এবং ঘুমন্ত মানুষদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালালো, ঠিক তখনই তাঁকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা বেতারযোগে সারা দেশে প্রচারিত হয়েছিল। সেই থেকে শুরু হল স্বাধীনতার সত্যিকারের সংগ্রাম।
দীর্ঘ নয়টি মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পেলাম আমাদের বহু কাঙ্খিত স্বাধীন বাংলাদেশ। অনেক জানা-অজানা শহীদদের রক্ত, অনেক মা-বোনের সম্ভ্রম এবং সর্বোপরি সমগ্র স্বাধীনতাকামী দেশবাসীর সীমাহীন আতœ-ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু শহীদদের যে সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন দেশ পেলাম, তার কতটুকু মর্যাদা আমরা রাখতে পেরেছি, একবারও কি সেটা ভেবে দেখেছি আমরা ? সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতিসহ নানাধরণের অপরাধ যেভাবে বাসা বেঁধেছে, তাতে করে কি শহীদদের সেই আত্ম-ত্যাগের প্রতি অসন্মান হয়ে গেল না? স্বাধীনতার এত বছর পার হয়ে গেল, তারপরেও আজ পর্যন্ত আমরা যুদ্ধাপরাধী রাজাকার গোষ্ঠীর বিচার এই দেশের মাটিতে করতে পারলাম না, এর দায়ভার কি আমাদের প্রত্যেকের কাঁধে পড়ে না? কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী তুলতে আমাদের সুদীর্ঘ ৩৭ বছর অপেক্ষা করতে হল ? কেন এই দাবী আমরা আরো আগে করলাম না ? এসব অপরাধে কি আমরা অপরাধী নই ? অনেকেই হয়তো বলে থাকবেন বিগত রাজনৈতিক সরকার গুলোর রাজত্বকালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী তোলার মত পরিবেশ ছিল না। কিন্তু এটা বলে কি জাতি হিসেবে আমরা নিজেরা নিজেদেরকে ছোট করছি না ? তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী শুরু হল, যদিও এটা আরো অনেক আগে হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করলাম যে, সমগ্র জাতির অস্তিত্বের সাথে জড়িত এই ইস্যুর প্রতি সরকার অনেকটা উদাসী আচরণ করছে।
প্রিয় বন্ধুরা, মহান স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে আসুন আমরা শপথ নেয়, আজ থেকে আমরা যার যার অবস্থানে থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে সোচ্চার হই এবং সরকারকে বাধ্য করি যেন তারা অতি দ্রুত সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই দেশের মাটিতে করে। এই ঘৃণ্য রাজাকার, আলবদর, আল-শামস্দের বিচার যতদিন এই দেশের মাটিতে হবেনা, ততদিন ১৯৭১ এর লাখো শহীদের রক্ত এবং হাজার হাজার মা-বোনের আতœ ত্যাগ এর কোন যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া সম্ভব হবে না।
সকলকে আবারো স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, সকল মা-বোন যারা বিভিন্নভাবে নানারকম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সকলকে জানাই আমার সশ্রদ্ধ সালাম।

লেখক
শাহরিয়া ইসলাম শায়লা
বিশিষ্ট সমাজ সেবক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ

Recent Posts