/tmp/drmyg.jpg চিন্তা ও কর্মে জিয়া ছিলেন একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক - ziaurrahman

চিন্তা ও কর্মে জিয়া ছিলেন একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক

অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান

“We need men who can dream of things that never were”. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির এই উদ্ধৃতিটির বাংলা অর্থ হচ্ছে, “আমাদের সেই সব মানুষদেরকেই প্রয়োজন, যারা এমন সব জিনিসের স্বপ্ন দেখাতে পারেন, যা আগে কখনো ছিল না।” মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে তেমনই একজন। সৈনিক জিয়ার রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠার প্রতিটি পরতে পরতে আমরা দেখতে পাই সুদূর প্রসারি চিন্তাভাবনার প্রতিফলন। তিনি নিজে ছিলেন ভিশনারি- সুন্দর ও কল্যাণের স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতেন; মানুষের মাঝেও তিনি সুন্দর আগামির স্বপ্ন দেখার মনস্তত্ব রচনা করতে নিরলস শ্রম দিয়ে গিয়েছেন। জিয়া ছিলেন এক ক্ষণজন্মা নক্ষত্র; তবে তাঁর দ্যুতির রেশ তাঁর শাহাদাতবরণের এতদিন পর এসেও মুছে যায়নি। অতি অল্প সময়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি মানুষের মাঝে তাঁর যে ছাপ রেখে গিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত সমসাময়িক ইতিহাসে মেলা ভার। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এই ক্ষণজন্মা মহানায়কের শাহাদাতবরণের পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান তার শোকবাণীতে বলেন, “নিজের দেশের মানুষের জন্য উন্নত জীবন অর্জনে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রপতি জিয়ার সুগভীর ও আন্তরিক অঙ্গীকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বস্তুতপক্ষে সমগ্র বিশ্বই, শ্রদ্ধার চোখে দেখতো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার অনুপস্থিতি তীব্রভাবে অনুভূত হবে।” বলা যায়, জিয়া তাঁর ভিশন ও মিশনের মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশই নয়; বরং ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই গ-ি ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার পর জিয়া সর্বপ্রথম ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সকল জনসাধারণকে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিতে রূপান্তরের দর্শন দিয়েছিলেন। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’- নামক এই দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ডে বসবাসরত সকল নাগরিকের জন্য সাম্যাবস্থা নিশ্চিত করা। জিয়ার এই দর্শনে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর অদূরদর্শীতা, সাংস্কৃতিক সা¤্রাজ্যবাদের পদলেহন, ভুল বিদেশনীতি এবং লুটতন্ত্রে মনযোগের কারণে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়। জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর বাংলাদেশকে সেই নৈরাজ্যকর ও অচলাবস্থা থেকে উদ্ধারে মনযোগী হন। প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া বাংলাদেশকে উদ্ধারের প্রয়োজন অনুভব করে তিনি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’- এর ধারণা দেন।
জিয়া তার ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিমূলে রয়েছে যে শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। শোষণমুক্ত সমাজ বলতে মূলত বোঝায় ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার মৌলিক চাহিদা পূরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। মূল এই বিষয়টির সঙ্গে জড়িত আছে আরো অনেক আনুসাঙ্গিক বিষয়। শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমেই এসবের সমাধান করতে হবে। ……এ কথা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটি শোষণমুক্ত সমাজ যা অত্যন্ত বাস্তব ও প্রগতিশীল একটি সমাজ, যাতে থাকবে সমতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যয়বিচার।” স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিভক্ত হয়ে পড়া বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে জিয়া জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। মাইলের পর মাইল হেঁটে তিনি আবিষ্কার করেন এদেশের অমিত সম্ভাবনাময়ী দিকসমূহ। বাংলার মেঠো পথে প্রকৃতির সুর আর মাটির সোঁদা গন্ধে জিয়া খুঁজে নেন আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণের নির্দেশনা। শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ দর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে মানুষের প্রতিভা ও নিজস্ব ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করা। এজন্য
তিনি জনগণকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইউনিটে সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার উপর জোর দেন। শ্রেণীবৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রায়নের প্রয়োজনে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লক্ষ্য ছিল একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ নির্মাণ করা। এ লক্ষ্য পূরণে তিনি জাতীয় উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের কাজে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি একটি শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। জিয়ার শান্তিপূর্ণ বিপ্লব কর্মসূচীতে ১২ টি দফা ছিল। যথাঃ ১) জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করা এবং একটি সুষম পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা, ২) কৃষি সংস্কার, ৩) শিক্ষা সংস্কার, ৪) পরিবার পরিকল্পনা, ৫) সমাজ সংস্কার তথা মানুষে মানুষে সাম্য ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা, ৬) প্রশাসনিক সংস্কার, ৭) ধর্মকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে মূল পরিচালক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া, ৮) আইন সংস্কার, ৯) শ্রম আইন সংস্কারের মাধ্যমে শ্রমিকদের অবস্থার সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন, ১০) জনশক্তির উন্নয়ন, ১১) প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান, আহরণ ও পূর্ণ সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা এবং ব্যাপকভাবে কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের ব্যবস্থা করা এবং ১২) সাংস্কৃতিক উন্নয়ন। জিয়া তাঁর এই কর্মসূচীকে বিপ্লব আখ্যা দিয়েছিলেন। কারণ শতাব্দীকালেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ঔপনিবেশিক শাসনের করতলগত ছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশকালের অবসানের পর বাংলাদেশের উপর জেঁকে বসে পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠী। দীর্ঘকালের শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়নে পিষ্ট বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই এদেশের মানুষের উপর জেঁকে বসে আরেকটি লুটেরা গোষ্ঠী। উপরন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সুশাসন ও শক্ত রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর অভাবে সা¤্রাজ্যবাদী চক্রও সুযোগ নেয়ার চেষ্টা শুরু করে। স্বাধীনতা পরবর্তি চড়াই-উতরাইয়ের সময় পেরিয়ে সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ জিয়াকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। ক্ষমতায় আসীন হয়েই তিনি লক্ষ্য করেন, আমাদের সময় কম; কিন্তু কর্তব্য অনেক। জিয়া তাই বহুমুখী কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি নতুন যুগে পা দিতে ব্রতি হলেন। তিনি অনুভব করলেন, একমাত্র বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই একটি ঐক্যবদ্ধ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। একটি শান্তিপূর্ণ বৈপ্লবিক কর্মসূচীর মাধ্যমে গণতন্ত্র নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করার এ ভাবনা থেকে জিয়া তার যুগান্তকারী ১৯ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। জিয়ার ঘোষিত সেই ১৯ দফা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। স্বাধীনতা লাভের ৫০ বছরে এখন পর্যন্ত আর কোনো রাষ্ট্রনেতাই জিয়ার দর্শন ও কর্ম পরিকল্পনাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। স্বল্প সময়ে জিয়া একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র বিনির্মাণে যে পথ দেখিয়ে গিয়েছেন, বাংলাদেশ মূলত তার উপর ভিত্তি করেই এগিয়ে চলছে। কিন্তু ঈর্ষাবশত কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে যেসব ক্ষেত্রেই আমরা এর বিপরীত কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখছি, সেখানেই রাষ্ট্র ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এই পরিণতি খুবই স্বাভাবিক। কারণ জিয়া তার দর্শন ও কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সান্নিধ্যে থেকে। তাই তাঁর গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহই কালক্রমে হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভূত-ভবিষ্যত।
ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাওয়া বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে উঠিয়ে এনে জিয়া উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার নেতৃত্বে খুব দ্রুতই পরিস্থিতির বদল হতে শুরু হয়েছিল। করিতকর্মা ও দূরদর্শী জিয়ার নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও ক্রমেই বিশ্বের মানচিত্রে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হতে শুরু করলো। বিশ্বের তাবৎ পরাশক্তিসমূহ জিয়ার বাংলাদেশকে সমীহের দৃষ্টিতে দেখতো। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী চক্রের জন্য এটা সহনীয় ছিল না। দূর্ভাগ্যজনকভাবে এদেশের কতিপয় স্বার্থাণ্বেষি চক্রও তাদের সাথে যোগ দেয়। এ দুইয়ের মিলিত চক্রান্তে ১৯৮১ সালের ৩০শে মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে শাহাদাতবরণ করেন। বস্তুত সেদিন তারা কেবল জিয়ার প্রাণপ্রদীপকেই থামিয়ে দিতে সচেষ্ট হয় নি; বরং তারা কোটি কোটি বাংলাদেশীর স্বপ্ন ও আকাঙ্খাতে বাধা দিতে সচেষ্ট হয়েছে। এদেশের আপামর জনতার কল্যাণে জিয়ার নিরলস শ্রম দেশ ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর শাহাদাতবরণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিটার্সবার্গ প্রেস পত্রিকা ৩১শে মে, ১৯৮১ তারিখে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, “রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যার ফলে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষেরা তাদের একজন ত্রাণকর্তাকে হারিয়েছে। ……জিয়া তার জনগণের সমস্যার সমাধানে গভীরভাবে মাথা ঘামাতেন। তিনি দেশের জনগণের প্রতি পুরোপুরি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। বাংলাদেশ এমন এক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে, যার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো জাতি একটি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছিল এবং অগ্রগতি অর্জন করছিলো।” ভারতের প্রথম সারির পত্রিকা দি টাইমস অব ইন্ডিয়া এক সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করে, “এমনকি ভারত কয়েকটি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়ার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট থাকলেও ভারতের পক্ষে এই সত্য উপেক্ষা করা সম্ভব নয় এবং সে তা করেওনি যে তিনি বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছেন এবং এজন্য তাকে সমর্থন করা উচিত।”

জিয়া তার ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিমূলে রয়েছে যে শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। শোষণমুক্ত সমাজ বলতে মূলত বোঝায় ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার মৌলিক চাহিদা পূরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। মূল এই বিষয়টির সঙ্গে জড়িত আছে আরো অনেক আনুসাঙ্গিক বিষয়। শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমেই এসবের সমাধান করতে হবে। ……এ কথা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটি শোষণমুক্ত সমাজ যা অত্যন্ত বাস্তব ও প্রগতিশীল একটি সমাজ, যাতে থাকবে সমতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যয়বিচার।” স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিভক্ত হয়ে পড়া বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে জিয়া জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। মাইলের পর মাইল হেঁটে তিনি আবিষ্কার করেন এদেশের অমিত সম্ভাবনাময়ী দিকসমূহ। বাংলার মেঠো পথে প্রকৃতির সুর আর মাটির সোঁদা গন্ধে জিয়া খুঁজে নেন আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণের নির্দেশনা। শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ দর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে মানুষের প্রতিভা ও নিজস্ব ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করা।

জিয়াকে তার রাষ্ট্রদর্শন ও কর্মপন্থার বিচারে একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক বলা চলে। প্রথাগত রাজনীতিবিদের চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে জিয়া রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। বক্তৃতার বদলে কাজকে প্রাধান্য দিয়েছেন; চটকদার বিজ্ঞাপনের বদলে টেকসই চিন্তাভাবনার অনুগামী হয়েছেন। এ কারণেই বাংলাদেশের অন্য সকল রাষ্ট্রনেতার চেয়ে ইতিহাসে জিয়ার অবস্থান ভিন্ন। তার আদর্শের অনুগামী হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে। কখনো সরকারে থেকে, কখনো সরকারের বাইরে থেকে তাঁর চিন্তা ও দর্শনকে প্রতিফলিত করার কাজে নিরলস সাধনা করে যাচ্ছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মনে করতেন, রাজনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের অর্থনৈতিক কল্যাণ ও অগ্রগতি সাধন। তিনি নিজে সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যা সমাধানের খোঁজে তার মতো অক্লান্ত চেষ্টা আর কেউ করেন নি। তৎসময়ে বিশ্বের সর্বাধিক দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত দেশটির নয় কোটি মানুষের জন্য তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল স্বপ্ন ও প্রেরণা। জিয়া বিশ্বাস করতেন, জীবনে তাঁর প্রধান কাজ হলো আহবান করা এবং প্রেরণা দেওয়া। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক জিয়া তাঁর চিন্তা কর্মের মধ্য দিয়ে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। এদেশের আপামর জনতার স্বপ্নে, প্রেরণায়, ভালবাসায় জিয়া মিলেমিশে আছেন এবং থাকবেন। যে রাষ্ট্রদর্শন তিনি জাতিকে বাতলে দিয়েছেন সেটা তাঁকে অমর করে রেখেছে বাংলাদেশের প্রতিটি অগ্রযাত্রায়।

লেখকঃ শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;
প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি