একটি ঘোষণা, একটি যুদ্ধ, একটি জন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে চায় প্রজন্ম

মোঃ মিজানুর রহমান

১৯৪৭ সালে দেশ দু’টি ভাগে ভাগ হয়। এক অংশের নাম ভারত আর অপর অংশের নাম পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রায় ১২০০ মাইল দুরে আমাদের অংশ পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে একটি অস্বাভাবিক রাষ্ট্র পাকিস্তান ছিল। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান সর্ম্পূণ বিচ্ছিন্ন ছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা বিভিন্নভাবে শাসন, শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছিল। পশ্চিম পাকিস্তানীরা তাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই পারিবারিকভাবে ও স্কুল জীবন থেকে শিক্ষা দিত বাঙ্গালীদের ঘৃণা করতে এবং নিকৃষ্টতম জাতিরূপে বিবেচনা করতে। তখন পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিটি পরিবার, সমাজ, সংবাদপত্র, কর্মচারী, বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি ও জনগণ নিন্দা করেছিল বাঙ্গালীদের এবং বাঙ্গালীদের ভাষা বাংলাভাষার। এ সবের বিরুদ্ধে প্রথম বিজয় আসে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের মাধ্যমে এবং তারপর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে ‘বাংলা ভাষার’ মর্য়াদা নিয়ে। কিন্তু তারপরও পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানীদের অর্থাৎ আমাদের শিক্ষা-চাকুরি তথা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য করেই চলে। এসবের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সংগঠিত ও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে পূর্ব পাকিস্তান । ফলে আসে ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান। এরই মধ্যে আইয়ুব খান পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করে কমাÐার-ইন-চিফ ইয়াহিয়া খানের কাছে। ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং এই নির্বাচনের জন্য Legal frame work order (এল এফ ও) বা আইনগত কাঠামো আদেশ প্রকাশিত করেন। নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে হলে এই Legal frame work order (এল এফ ও) শর্ত মেনে নিতে হবে। Legal frame work order (এল এফ ও) ছিল পাকিস্তান স্বার্থ সুরক্ষার মোটামুটি একটা দলিল। সেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে Legal frame work order (এল এম ও) অর্ডিন্যন্সে সাক্ষর করে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। কিন্তু মওলানা ভাসানীর ‘ন্যাপ’ ও আতাউর রহমান খান এর ‘জাতীয় পার্টি’ সহ অন্যান্য দল Legal frame work order (এল এম ও) মেনে নেন না এবং নির্বাচনেও অংশগ্রহন করেন না। মওলানা ভাসানী Legal frame work order (এল এম ও) বা আইনগত কাঠামো আদেশের অধীনে নির্বাচনে যাওয়াকে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর কাছে নীতিগত পরাজয় হিসেবে গণ্য করেছিলেন। যাই হোক সে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬৯ টি আসনের মধ্যে মহিলা আসনসহ ১৬৭ টি আসন পেয়ে বিজয় লাভ করে। ১৯৭০ এর এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইজতেহার ছিল-ধর্ম নিরপেক্ষ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক, সামাজিক সংস্কার ও অন্যতম ছিল পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন। আওয়ামী লীগের এ বিজয়ের ফলে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে শেখ মুজিবের দেন-দরবার চলতে থাকে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানীরা শেখ মুজিবকে ক্ষমতা না দেওয়ার জন্য তাল-বাহানা করতে থাকে। আলোচনার মাধ্যমে ০৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহবান করেন।। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান তাদের ক‚ট-কৌশল চালাতেই থাকে। ০৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় বসে না। শেখ মুজিব ০৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ০৯ মার্চ মওলানা ভাসানী ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ভাষণ দেন। শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া, শেখ মুজিব-ভুট্টো, শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টো ও অন্যারা এভাবে আলোচনা চলতেই থাকে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন না। শেখ মুজিব সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে ক্ষমতায় আহোরনের জন্য নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানীরাও ক্ষমতা না দেওয়ার জন্য গড়িমসি করতে থাকেন এবং গোপনে গোপনে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের রসদ যোগাতে থাকেন। এমনিভাবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারায় পশ্চিম পাকিস্তানীরা শেখ মুজিবকে বন্ধী করে নিয়ে চলে যায় এবং পূর্ব পাকিস্তানে তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়-যার নাম হয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। জাতি তখন এক অমানিশা আধারের মধ্যে পতিত হয়। নেতা হারা জাতি হয় দিশা হারা। এখানে উল্লেখ-[২৫ মার্চ যখন স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীদের উপর পাকিস্তানী হানাদাররা আক্রমন চালায় তখনও স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানান সে সময়ের প্রধান রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিব। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’, ‘তাজউদ্দিন আহমদ ঃ নেতা ও পিতা’ কিংবা আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকারের লেখা “৭১ ঃ ভেতরে-বাইরে”সহ বাংলদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইতে এর প্রমাণ রয়েছে। এতে দেখা যায়, আওয়ামীলীগ নেতা মরহুম তাজউদ্দিন আহমদ ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার আহবান জানালেও শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নি, এমনকি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানান। শুধু অস্বীকৃতিই নয় তিনি তাজউদ্দিনকে পরামর্শ দিয়ে বলেন “যাও নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও আমি ২৭ মার্চ হরতাল ডেকে দিয়েছি।” আর পাকিস্তানীরা যাতে তাকে দেশদ্রোহী বলতে না পারে এজন্য শেখ মুজিব পাকিস্তানীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। (সুত্র:‘তারেক রহমান এবং বাংলাদেশ’-আব্দুল হাই শিকদার)]।
শেখ মুজিব হীন এমনি পরিবেশের মাঝে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ ভারতে পারি জমান আবার কেউ কেউ নিজেকে লুকায়ে বা আত্মগোপন করে রাখেন। এ সময় তৎকালীন অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে দ্বায়িত্ব পালন করেন বাঙালী মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি চট্টগ্রামে কিছু সেনাবাহিনী নিয়ে সংগঠিত হয়ে প্রথমে রিভোল্ট ঘোষণা করলেন এবং পরে ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। যা পরবর্তীতে ২৭,২৮,২৯,৩০ মার্চ পর্যন্ত কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত হয়। ঘোষণাটি বাংলা ও ইংরেজী দুই ভাষাতেই পাঠ করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, তৃতীয় খন্ডে বর্ণিত জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাটি নিম্নরূপ-

Dear fellow freedom fighters,

I, Major Ziaur Rahman, Provisional President and Commander-in-Chief of Liberation Army do hereby proclaim independence of Bangladesh and appeal for joining our liberation struggle. Bangladesh is independent. We have waged war for the liberation of Bangladesh. Everybody is requested to participate in the liberation war with whatever we have. We will have to fight and liberate the country from the occupation of Pakistan army.

Inshallah, victory is ours

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

প্রিয় সহযোদ্ধা ভাইয়েরা,

“আমি, মেজর জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আর্মি চীফ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য দেশবাসীকে আহবান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অবর্তীন হলাম। আপনারা যে যা পারেন সামর্থ্য অনুযায়ী অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। আমাদেরকে লড়াই করতে হবে এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে দেশ ছাড়া করতে হবে”।

ইনশাআল্লাহ, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।


মেজর জিয়াউর রহমান এর কণ্ঠে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে Dear fellow freedom fighter’s-I, Major Ziaur Rahman, Provisional President…………
ঘোষণাটি অর্থাৎ স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে দেশের দেশ প্রেমিক জনতা- আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, কৃষক-শ্রমিক-কিশোর-যুবক, নর-নারী তথা আম জনতা যার কাছে যা ছিল, যে যে ভাবে পারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল। অপরদিকে মেজর জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের বা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকলিীন সময়ে শুরু থেকেই ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। তারপরেও তিনি থেমে থাকেন নি। চুড়ান্ত বিজয় অর্জনের লক্ষে ১৯৭১ এর ০৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম ব্রিগেড “জেড ফোর্স” গঠিত হয়। মেজর জিয়াউর রহমান এর নাম অনুসারেই ‘জিয়া ফোর্স বা জেড ফোর্স’ রাখা হয় এবং এর নেতৃত্বেও ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। দুইটি কোম্পানি-ডেল্টা ও ব্রেবো এবং তিনটি নিয়মিত পদাতিক বাহিনী- প্রথম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, তৃতীয় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে গঠিত ‘জেড ফোর্স’ দিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র সিলেট, ময়মুনসিংহসহ কুড়িগ্রামের কিয়দংশ ও আরো অন্যান্য অংশে বীরত্বের সঙ্গে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন।
দেশের দেশপ্রেমিক আম-জনতা তো বটেই ; তাছাড়াও বিভিন্ন গেরিলা বাহিনীদের দ্বারা প্রায় নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আর দেড় লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর, ৭১ এ অর্জিত হয় বাংলাদেশের চুড়ান্ত বিজয়। এই চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর মহান স্বাধীনতার ঘোষক, স্বশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীন, স্বার্বভৌম, লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশে স্ব-পদে ফিরে যান। তিনি (মেজর জিয়াউর রহমান) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (স্বাধীনতা পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমান সরকার) কর্তৃক “বীর উত্তম” উপাধিও পান।
মেজর জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এ সর্ম্পকে মুক্তিযুদ্ধের ০৩নং সেক্টর কমাÐার মেজর কে এম শফিউল্লাহ বীরউত্তম তার [Bangladesh at War, Academic Publishers, Dhaka, 1994] বইতে লিখেছেন, “মেজর জিয়া ২৫ মার্চের রাত্রিতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সদলবলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, তার কমাÐিং অফিসার জানজুয়া ও অন্যদের প্রথমে গ্রেফতার এবং পরে হত্যা করে পাকিস্থানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর মোকাবেলার জন্য সবাইকে আহবান জানান। এতে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।
পাক হানাদার বাহিনীর জেনারেল রাও ফরমান আলী স্বাধীনতার ঘোষণা সর্ম্পকে [‘বাংলাদেশের জন্ম, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিঃ, পৃষ্টা ৮৭] লিখেছেন, “প্রতিটি বাঙ্গালী ইউনিটিই বিদ্রোহ করেছিল, মেজর জিয়াউর রহমান তার কমাÐিং অফিসার কর্নেল জানজুয়াকে হত্যা করেছিলেন এবং নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ভারতের সাংবাদিক জ্যোতি সেনগুপ্ত তার ‘হিস্টোরি অব ফ্রিডম মুভমেন্ট ইন বাংলাদেশ’-নয়া প্রকাশ, কলকাতা, ১৯৭৪,পৃষ্টা ৩২৫.-বইতে লিখেছেন “….. মেজর জিয়া ও তার বাহিনী ২৬ মার্চ ভোর রাতে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং ওই দিন সন্ধ্যায় বেতারের মাধ্যমে সর্বপ্রথম নিজের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।
১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ আর্জেন্টিনা থেকে প্রকাশিত প্রখ্যাত দৈনিক Buenos Aires Herald এর শিরোনাম ছিল, Rebel Government set up under Major. এই রিপোর্টে বলা হয, মেজর জিয়া নিজেকে হেড অব স্টেট ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
‘Nine Months of Freedom: The story of Bangladesh’ A Documentary Film by S Sukhdev, Japan, 1972-এর সুত্র মতে- মেজর জিয়ার নেতৃত্বে অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কর্তৃক দখলকৃত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ ১৯৭১ সারাদিন ওই (স্বাধীনতার) ঘোষণাপত্র রেকর্ড করে বার বার বাজানো হয়। ওইদিন ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ০৭ টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বর্হিনোঙ্গর থেকে একটি জাপানি জাহাজ কর্তৃক জিয়ার ঘোষণা রেকর্ড করা হয়। যা পরবর্তীতে রেডিও অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক সংগৃহীত হয় এবং সেখান থেকে তা সম্প্রচারের পর সারা বিশ্ব জানতে পারে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ০৭ টা ৪৫ মিনিট যা অস্ট্রেলিয়ায় রাত ১১ টা ৪৫ মিনিট। সেই ঘোষণা অস্ট্রেলিয়া ব্রডকাস্ট করে তাদের স্থানীয় সময় রাত ১২ টার পর অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় ২৭ মার্চ। এই কারনে বলা হয় যে, জিয়া ২৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু জাপানি জাহাজ কর্তৃক জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার রেকর্ড প্রমান করে যে, ২৬ মার্চই জিয়া প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
“মেজর জিয়া ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।”[সুত্র:‘দ্য লিবারেশন ওয়ার’,মোঃ আযুব ও শ্রী কে সুব্রাহ্মনিয়াম, এস চান্দ এন্ড কোং, নয়াদিল্লি,১৯৮০,পৃষ্টা ৯।]
“মেজর জিয়া ২৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।” [সুত্র: দ্য লাইটেনিং ক্যাম্পেইন’, মেজর জেনা: ডি কে পালিত,থমসন প্রেস,নয়াদিল্লি, ১৯৭২, পৃষ্টা ৪৫।
২৮মার্চ ১৯৭১। ভারতের ‘দি স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, “…. স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল ২৫ মার্চ রাতেই। আর এই ২৫ মার্চ মধ্যরাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন মেজর জিয়া। শুধু বিদ্রোহ ঘোষণাই করেন নি, নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘোষণাটিও পাঠ করেছিলেন।”
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়কার টিক্কা খানের পি.আর.ও সিদ্দিক সালিক তার ‘Witness to Surrender’ page 79.- বইতে রিখেন, “…Major Zia took control of the transmitters seperatly located on kaptai road and used the available equipment to broadcast the ‘declaration of independence’ of Bangladesh.
ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা সুখান্ত সিং যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং পরবর্তীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহন করেন, তিনি তার “India’s Wars Since Independence: The Libaration of Bangladesh’, Vol.1,Delhi, Lancer Publishers,1980- বইয়ে লিখেছেন, “ইতিমধ্যে ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার থেকে একজন বাঙালী অফিসার মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।”
ভারতের সমর নায়ক লেঃ জেঃ জেএফআর জ্যাকব ‘Surrender At DACCA: Birth of Nation’ UPL, Dhaka 1997, page 35.-বইয়ে লিখেছেন,“চট্টগ্রামের অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মেজর জিয়াউর রহমান রেজিমেন্টের দ্বায়িত্ব গ্রহন করেন এবং বেতার ভবন নিয়ন্ত্রন নিয়ে ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দান করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের রাজনৈতিক সচিব মাঈদুল হাসান লিখেছেন, “২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ৮ ইবির বিদ্রোহী নেতা মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। (সুত্র: মূলধারা ৭১, পৃষ্টা ৫)।
আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর রফিক-উল ইসলাম বীরউত্তম; মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি ১৯৭১ সালের ১১জুন থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ০১নং সেক্টর কমাÐার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা বইয়ের ১০৫-১০৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন: ২৭ মার্চ বিকেলে তিনি (মেজর জিয়া) আসেন কালুরঘাটে এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
১৯৭২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমীতে মুক্তিযুদ্ধের ১১ জন সেক্টর কমাÐার বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেক্টর কমাÐারের উপস্থিতিতে যখন জিয়াউর রহমান এর নাম ঘোষণা করা হয়, “……২৫ মার্চ পাক বাহিনীর বর্বর হামলার পর চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাকারী ও তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলার কৃতিত্বের অধিকারী কর্নেল জিয়াউর রহমান…..”, তুমুল করতালির মধ্যে দিয়ে বক্তৃতা করতে উঠেন তিনি। (সুত্র: দৈনিক বাংলা,২০-০২-১৯৭২।)
১৯৭৭ সালে একবার ভারত সফর করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সেই সময় ২৭ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর সম্মানে এক ভোজসভায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার ভ‚মিকার কথা স্মরণ করে বলেন, “ইতিমধ্যে আপনার দেশের ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণাকারী ও সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার সমুজ্জ্বল অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গেছে…..” Your position is already assumed in the annals of the history of your country as a brave fighter who was the first to declare the independence of Bangladesh.[source: Bangladesh in International politics by M. Shamsul Haq, 1993, page 96.]
মুক্তিযুদ্ধের ০৫নং সেক্টর কমাÐার ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। ২০০৯ সালের ২৪ মার্চ তার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার হয় বাংলাভিশন চ্যানেলে। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে মেজর জিয়া রিভোল্ট করেন এবং পরে নিজের নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। (সুত্র:‘তারেক রহমান এবং বাংলাদেশ’,আব্দুল হাই শিকদার,১১৫ পৃষ্ঠা)।
মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মু. ইব্রাহিম বীরপ্রতীক ২০০৭ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারী ক্রোড়পত্রে ‘তিন যুগ পর মুক্তির স্বাদ’ শিরোনামে লেখা একাট নিবন্ধে লিখেছেন, “চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের কালুরঘাট সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ ১৯৭১ বিকাল বেলা প্রথমবার নিজ নামে ও নিজ দ্বায়িত্বে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।”
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অলি আহাদ (মরহুম) তার ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৭-৭৫’ বইতে স্বাধীনতার ঘোষণা সর্ম্পকে লিখেন. “…..আমি জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরীর সহিত নিয়মিত যোগাযোগ করিতাম এবং মাঝে মাঝে তাহার অভয় দাস লেনের বাসায় রাত্রিযাপন করিতাম। তাহার বাসায় রাত্রিযাপন করিতে গিয়া তাহারই রেডিও সেটে ২৭ শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র হতে ‘স্বাধীন বাংলা রেডিও’র ঘোষণা শুনিতে পাই। এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে মেজর জিয়াউর রহমান এর কণ্ঠস্বরে স্বাধীন বাংলার ডাক ধ্বণিত হইয়াছিল। এই ডাকের মধ্যে সেই দিশেহারা, হতভম্ব, সম্বিতহারা ও মুক্তিপ্রাণ বাঙ্গালী জনতা শুনতে পায় এক অভয়বাণী, অত্মমর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়িবার আহবান, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ের সংবাদ।
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি ও লেখক বদরুদ্দিন ওমর লিখেছেন,“মেজর জিয়াই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন আর সেটা সশস্ত্র বাহিনীগুলোর প্রতিরোধ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল। সেটা ঘটেছিল এমন এক মর্হুতে যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব অকেজো হয়ে পড়েছিল।(সুত্র: স্বাধীনতার ঘোষণাকৃত, বদরুদ্দিন ওমর,অর্ন্তগত:প্রথম আলো প্রষ্টা-০৯,ক-০১,তারিখ ২৫ জুলাই ২০০৪।]
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসান লিখেছেন,“….২৬ মার্চ তিনি (মেজর জিয়া) নিজেকে বাংলাদেশের প্রভিশনাল কমাÐার ইন চিফ ও রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার কথা বলেন এবং স্বাধীনতার ডাক দেন।(সুত্র: ‘তারেক রহমান এবং বাংলাদেশ’,আব্দুল হাই শিকদার,১১৫ পৃষ্ঠা)।
এদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের ০৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেলিন। সেই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে অন্যতম এক উক্তি ছিল ‘…….এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।………..’। কিন্তু অনেকেই এটাকেই মুক্তিযুদ্ধের ডাক বলে থাকেন। কিন্তু না! এটাই ছিল স্বাধীনতার ঐতিহাসিক পেক্ষাপট নির্মাণের অন্যতম সোপান। এটা যদি মুক্তিযুদ্ধের ডাক বা শুরু হতো তাহলে কেন ০৭ মার্চের পর শেখ মুজিব ইয়াহিয়া-ভুট্টো গংদের সাথে ধারাবাহিক ভাবে ক্ষমতা লাভের জন্য অলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তো পশ্চিম পাকিস্থানীদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুই হয়েছিল না। আলোচনা চলতে চলতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত গিয়েছিল-কে হবে পাক শাসক-পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ট (৮৮ টি আসনে বিজয়ী পাকিস্তান পিপলস পার্টি) দলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো না পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ট (মহিলা আসনসহ ১৬৭ আসনে বিজয়ী আওয়ামীলীগ) দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও মোট আসনের ভিত্তিতে শেখ মুজিবুর রহমান এর আওয়ামীলীগ এগিয়ে ছিল তবুও কোন সমাধান হচ্ছিল। …… এমন সময় পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদাররা পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং শেখ মুজিব পাকিস্তানের ‘মিরওয়ারী’ কারাগারে বন্দী হয়ে থাকেন। শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হয়েছিলেন না আত্ম সমর্পন করেছিলেন এ নিয়ে বিতর্ক বিদ্যামান। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান যে এই ২৫ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নি তার একটি উদাহরন এই নিবন্ধেই আব্দুল হাই শিকদারের লেখা ‘তারেক রহমান এবং বাংলাদেশ’ বই থেকে আগেই উল্লেখ আছে।
এছাড়াও মো: হারুন-অর-রশীদ এর সম্পাদনায় ‘বাংলাদেশের রাজনীতি’ শীর্ষক বইতে স্বাধীনতার ঘোষণা সর্ম্পকে লেখা আছে ‘যারা আওয়ামীলীগ করেন তারা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আবার যারা প্রকৃত ইতিহাস অনুসন্ধান করতে পছন্দ করেন তারা ইতিহাসের চরম সত্য বারবারই তুলে ধরেন যে, জিয়াইর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭১ সালের ০৬ নভেম্বর নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে তিনি বলেন, “This other country has pushed across the border people who did not vote for their government, but voted for the regime they wanted. There was no other crime which this people have committed, because the cry for independence asore after Shaik Mujib was arrested and not before. He himself, so for as I know, has not asked for in dependence ever now”.
অর্থাৎ এই অন্য দেশটি সেই জনগণকে সীমান্তের এ পাড়ে ঠেলে দিয়েছে, যারা তাদের সরকারের পক্ষে ভোট না দিয়ে নিজেদের পছন্দের লোককে ভোট দিয়েছে। তারা অন্য কোন অপরাধ করেন নি। স্বাধীনতার আওয়াজ ওঠে শেখ মুজিবের গ্রেফতারের পর এর আগে নয়। আমার জানা মতে, এমনকি এখন পর্যন্ত তিনি স্বাধীনতার কথা বলেন নি। (সুত্র: ভারতের তথ্য ও প্রচার মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডকুমেন্টস)
মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ বইতে উল্লেখ করেন, “…… মেজর জিয়া কালুরঘাট কেতার কেন্দ্রে এসে প্রথম যে ঘোষণাটি দিলেন, সে ঘোষণায় তিনি নিজেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। (সাবেক) এই পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেছিলেন,….আমার স্মরণশক্তিতে যতটুকু মনে আছে, সে টুকু বলব। এই ঘোষণা সংক্রান্ত ব্যাপারে একটু আগে যা বললাম, তার বাইরে কোন কিছু কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আর শোনা যায় নি। কেউ চট্টগ্রামে এ সংক্রান্ত সংবাদ পাঠিয়েছিল বা জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে পাঠিয়েছিল, এমন কোন সংবাদ সে সময় আমরা শুনি নি। এ সর্ম্পকে কথা বলা হয় স্বাধীনতার পর….আমি নিজে জানি, যুদ্ধের সময় জানি, যুদ্ধের পরবর্তী সময়ও জানি যে মেজর জিয়ার এই ঘোষণাটি পড়ার ফলে সারা দেশের ভিতরে এবং সীমান্তে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মনে সাংঘাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে, হ্যাঁ, এবার বাংলাদেশে একটা যুদ্ধ নামল।”
সাপ্তাহিক পূর্ণিমায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডঃ ওযাজেদ মিয়া (শেখ হাসিনার স্বামী) স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অনুভ‚তি অকপটে ব্যক্ত করেন। ডঃ ওয়াজেদ মিয়া বলেন, জিয়া সর্ম্পকে খুব উচ্চ ধারনা ছিল বঙ্গবন্ধুর। প্রচন্ড ¯েœহের চোখে দেখতেন জিয়াকে। ৭১ এর মার্চ মাসে যখন আন্দোলন তুঙ্গে এবং ………….? ঠিক এমন সময় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান নিজের নাম উচ্চারণ করে ঘোষণা করেছিলেন। কঠিন বিপদ নেমে আসতে পারতো তার পরিবারের উপর। সন্তান কোলে খালেদার সম্ভাব্য করুন পরিণতির কথা বিন্দুমাত্র ভাবেন নি জিয়া। জিয়ার এই সাহসী ভ‚মিকাকে অত্যন্ত সম্মান করতেন বঙ্গবন্ধু এবং বলতেন সৈনিকদের মধ্যে জিয়া সত্যিই এক যোগ্য সন্তান।(সুত্র:‘শহীদ জিয়াউর রহমান সফল রাষ্ট্রনায়ক’, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, পৃষ্টা ১৫-১৬।)
এ বিষয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এর বক্তৃতার উদ্ধৃতি উল্লেখ করা যায়। তিনি ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল স্বাধীন বাংলা বেতারে জাতির ও বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে তার দেওয়া প্রথম ভাষণে বলেন,“The brilliant success of our fighting forces and the daily additionss to their strength in manpower and captured weapons has enabled the Government of the people’s Republic of Bangladesh, first announced through Major Ziaur Rahman to set up full fledged operational base from which it is administrating the liberated areas. (source: Bangladesh Documents-Govt. of India)
অর্থাৎ “লড়াইরত আমাদের বাহিনীর চমৎকার সাফল্য এবং প্রতিদিন তাদের শক্তির সংগে জনবল বৃদ্ধি এবং দখলকৃত অস্ত্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে-যা মেজর জিয়াউর রহমান এর মাধ্যমে প্রথম ঘোষিত হয়, সক্ষম করেছে পূর্ণাঙ্গ অপারেশনাল বেস প্রতিষ্ঠা করতে, যেখান থেকে মুক্তাঞ্চলের প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে।”(সুত্র-অনুবাদ: মাসুদুল হক কর্তৃক ‘জিয়াউর রহমান স্মারক গ্রন্থ’।)
উপরের আলোচনার পেক্ষিতে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধের পেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং সে পেক্ষাপটে অমানিশার আধার, দিশাহারা জাতির মাঝে বুকভরা সাহস নিয়ে (নিজ পরিবারকে অজানা অনিশ্চয়তার মাঝে রেখে) এগিয়ে এসেছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা । মেজর জিয়াউর রহমানই বাংলার ইতিহাসে একমাত্র সশস্ত্র স্বাধীনতার ঘোষক।
মূলকথা হচ্ছে-বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলে সংকটে পড়বে নতুন প্রজন্ম। যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য জীবন দিয়েছে এবং সম্ভ্রম হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ ; নতুন প্রজন্ম জানতে চায় সে দেশের সঠিক ইতিহাস। যে সঠিক ইতিহাস স্বাধীনতার একটি ঘোষণা এবং সে ঘোষণা কে-কখন-কোথায়-কিভাবে-কেন দিয়েছিলেন ? যে সঠিক ইতিহাস-বাংলাদেশের একটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছিলেন-যাদের জন্য এ দেশ থেকে পালিয়েছিল বা পরাজিত হয়েছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ; তার সঠিক ইতিহাস। যে সঠিক ইতিহাস-বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস । অর্থাৎ যার সারকথা হচ্ছে-
“একটি ঘোষণা, একটি যুদ্ধ, একটি জন্ম
সঠিক ইতিহাস জানতে চায় প্রজন্ম।”
কেননা, আজাকের নতুন প্রজন্ম চায়-যাতে কেউ আর এদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে ; অসংখ্য মানুষের রক্তে ভেজা এই দেশের মাটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব (প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও) অটুট রেখে আগামী দিনে বর্হিবিশ্বে মাথা তুলে-স্বদর্পে ‘স্বনির্ভর উন্নত বাংলাদেশ’-পরিচয় নিয়ে দাড়াতে।
লেখকঃ মোঃ মিজানুর রহমান-সাংবাদিক, কবি ও কলামিস্ট।

Recent Posts